ই-ভ্যালির প্রতারণা : ব্যবস্থা নিতে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটি

প্রযুক্তি ডেস্ক,

  • প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২০, ২:১৫ অপরাহ্ণ

অস্বাভাবিক ‘ক্যাশব্যাক’ অফার দিয়ে ব্যবসা করছে বাংলাদেশি ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি। ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দেওয়া হচ্ছে। একের পর এক চটকদার অফারে হাজার হাজার গ্রাহক আকৃষ্ট হচ্ছেন। ফলে অল্পসংখ্যক গ্রাহক লাভবান হলেও বেশির ভাগই হচ্ছেন প্রতারিত। দেরিতে হলেও ই-ভ্যালির এ ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার (২৬ আগস্ট) তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আবদুছ সামাদ আল আজাদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা)’র বৈঠক নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তাই এদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারিনি। বৃহস্পতিবার (আজ ২৭ আগস্ট) ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব।’ কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই এ বিষয়টি বলা যাচ্ছে না। তবে কিছু না কিছু ব্যবস্থা তো নেয়া হবেই।’ এদিকে বাজারে ব্যবসার প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে একচেটিয়া (মনোপলি) অবস্থার সৃষ্টি করছে ই-ভ্যালি, যা আইনের বরখেলাপ বলে মনে করছে প্রতিযোগিতা কমিশন। এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বরাবর চিঠি ইস্যু করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন। প্রতিযোগিতা কমিশন চিঠিতে বলেছে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-ভ্যালির ওয়েবসাইটে ‘ঈদ ধামাকা’ নামে একটি অফার সম্প্রতি নজরে আসে। এ অফারে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাশব্যাক অফার রয়েছে, যার পরিমাণ ৮০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত। সাধারণত এ ধরনের অফার ভোক্তাকে কম মূল্যে পণ্য কিনতে প্রলুব্ধ করে।

কিন্তু এ অফারের শর্তাবলির ৪ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে ‘ঈদ ধামাকা ক্যাম্পেইনে পার্শিয়াল পেমেন্ট অ্যালাউড না, ফুল পেমেন্ট করতে হবে। ক্যাশব্যাক ই-ভ্যালি ব্যালেন্সে যোগ হবে, পেমেন্ট করার তিনদিন পর। এই ক্যাশব্যাক পরবর্তী সময়ে ই-ভ্যালিতে যে কোনো রেগুলার শপ থেকে কেনাকাটায় ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রোডাক্টের ৬০ শতাংশ ব্যালেন্স থেকে এবং ৪০ শতাংশ নিউ পেমেন্ট করতে হবে। প্রতিযোগিতা কমিশন মনে করে, ই-ভ্যালির অফারের ৪ নম্বর শর্তের কারণে এটি প্রচলিত ডিসকাউন্ট/ক্যাশব্যাক/লয়ালটি রিবেট না হয়ে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ১৫ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী শর্তযুক্ত ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উপযুক্ত শর্ত থেকে প্রতীয়মান হয়, ই-ভ্যালির ক্যাশব্যাক অফারের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বা বিস্তারের কারণ ঘটছে বা বাজারে মনোপলি অবস্থার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ৮ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কিছু তথ্যাদি পত্র প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে প্রদানের জন্য তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ই-ভ্যালির কাছে প্রতিযোগিতা কমিশন ই-ভ্যালি সম্পর্কিত তথ্যাদি (কোম্পানির বিস্তারিত বিবরণ), ই-ভ্যালির বার্ষিক টার্নওভার ও আয়-ব্যয়ের তথ্য (বিগত তিন বছরের অথবা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত), ই-ভ্যালির আওতাভুক্ত পণ্যসমূহের বিবরণ, ই-ভ্যালির পণ্যের ভৌগোলিক সীমানার বিবরণ {বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বহির্বিশ্বে (যদি থাকে)}, ই-ভ্যালির মাধ্যমে যেসব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তাদের তালিকা ও ব্যবসায়িক লেনদেনের পদ্ধতি ও শর্তাবলি, ৮০-১৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে কীভাবে ব্যবসা করছে তার তথ্য, ই-ভ্যালির ঈদ ধামাকা অফারের সঙ্গে অন্যান্য অফারের পার্থক্য কী (বিস্তারিত বিবরণসহ), ঈদ ধামাকা অফার সময়ের আগের তিন মাসের বিক্রি, আয় ও মুনাফার সঙ্গে অফার চলাকালীন বিক্রি, আয় ও মুনাফার তুলনামূলক বিবরণী। ই-ভ্যালি সূত্রে জানা গেছে, তাদের নিবন্ধিত গ্রাহক ৩৫ লাখ ছাড়িয়েছে। মাসে লেনদেন হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকার পণ্য। ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে কর দেওয়া হয়েছে দেড় কোটি টাকা। গড়ে প্রতি মাসে পণ্য বিক্রির অর্ডার পাচ্ছে তারা ১০ লাখ করে। তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে ২৫ হাজার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং তারা ৪ হাজার ধরনের পণ্য বিক্রি করে কমিশন পাচ্ছে। মাত্র ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন দিয়ে শুরু করা এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন এখনো ৫০ হাজারই। ২০১৮ সালের ১৪ মে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নেয় ই-ভ্যালি ডটকম লিমিটেড। এর অনুমোদিত মূলধন ৫ লাখ টাকা। ১০ টাকা মূল্যমানের এক হাজার শেয়ারের মালিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল। চার হাজার শেয়ারের মালিক তার স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল আর শামীমা নাসরিন দিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...