ভারতকে বাংলাদেশের বিমানবন্দর ট্রানজিট না দেয়ার দাবি

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

ভারতকে কোনোমতেই বাংলাদেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করতে না দেয়া, দেশ থেকে সুদ প্রথা প্রত্যাহার করা, বারবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দাসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এতে সমমনা ১৩টি দলও অংশগ্রহণ করে।

মাবনবন্ধনে বক্তারা বলেন, সম্প্রতি বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেছেন ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো থেকে যারা লন্ডন যেতে চান তাদের দিল্লি গিয়ে ফ্লাইটে উঠতে হয়। সেক্ষেত্রে তারা যদি সিলেট বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের যাত্রী হন তাহলে কষ্ট কম হবে। ভারতকে রোড ট্রানজিট, ট্রানশিপমেন্ট, মোংলা পোর্ট, চট্টগ্রাম পোর্ট দিয়ে কোনো কিছুতেই বাংলাদেশ লাভবান হয়নি বরং সবকিছুই বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতি এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত হয়েছে। সেক্ষেত্রে আবার বিমানবন্দর ট্রানজিট দেওয়া হবে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো। কাজেই সরকারকে এরূপ আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে হবে।

তারা বলেন, সুইডেন এবং নরওয়েতে পবিত্র কুরআন শরীফের অনুলিপি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানো উচিত। একইসাথে শার্লি এবদো পত্রিকায় পুনরায় হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ করায় ওআইসি’র মাধ্যমে তাদের প্রতি কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া ইসলামিক মূল্যোবোধে আঘাত করে, দেশে এই জাতীয় কোনো মানহানীকর বক্তব্য, লেখা, প্রকাশ ও প্রচার করলে, তাৎক্ষণিক মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, এখন পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে সাহেদ-সাবরিনার মতো প্রতারক। আবজালের মতো দুর্নীতিবাজ, ফরিদপুরের শামীমের মতো অর্থপাচারকারী। এমপি পাপুলের মতো মানব পাচারকারী পাপিয়ার মতো পাপী। বাবা-মাকে হত্যাকারী ও আঘাতকারীর মতো সন্তান, ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা কিশোর গ্যাং। পর্নোতে আশক্ত শিশু কিশোর। সবকিছু মিলিয়ে সমাজ এখন ধ্বংসের মুখোমুখি। মুসলমান হিসেবে এসব থেকে রেহাই পেতে এখন দরকার সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধ।

বক্তারা বলেন, ভারতীয় অনলাইন জুয়া ‘শিলং তীর’- এ নিঃস্ব হচ্ছে বাংলাদেশিরা। অবিলম্বের এর বিরুদ্ধে বিশেষ সরকারি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের শিলং ও গৌহাটি এলাকা থেকে চালু হয়েছে ‘শিলং তীর’ নামের জুয়া। এখন খোদ রাজধানীসহ বাংলাদেশের জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এসব জুয়া খেলায় জড়িয়ে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে। লোভে পড়ে খেলা সম্পৃক্ত হলেও অধিকাংশ অংশগ্রহণকারীদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে জুয়া পরিচালনাকারীরা।

বক্তারা আরো বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদা না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্থাপিত বেশকিছু কেন্দ্র বসিয়ে রাখা হচ্ছে। তারপরও ভারত থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। পিডিবির তথ্যমতে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে গড়ে খরচ পড়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ টাকা। এরমধ্যে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ কিনতে খরচ হয় সবথেকে বেশি, যা প্রতি ইউনিটে সাত টাকার বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে খরচ বেশি পড়লেও গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে তা ইউনিট প্রতি তিন টাকার কাছাকাছি। তাই গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে খরচ অনেকটাই কম পড়বে এবং গ্রাহক হয়রানি রোধ হবে।

তারা বলেন, ভারতের অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণ শুরু করে মোদী নিজের পতনকেই তরান্বিত করছে। রাম মন্দির নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন হিন্দুত্ববাদী বিজিপি সরকারের এক ঐতিহাসিক ভুল। একদিন এ ভুলের খেসারত দিতে হবে ভারতকে। বাবরি মসজিদের স্থানে গায়ের জোরে রাম মন্দির স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে কুঠারাঘাত করা হয়েছে।

মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এসময় দেশ থেকে সুদ প্রথা প্রত্যাহার করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারীর সমন্বয়ে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের সভাপতি- আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...