সব
স্বদেশ বিদেশ ডট কম
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল উখিয়ার ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় কিছু দুষ্কৃতিকারী অবস্থান নিয়েছে এবং তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই রোববার ভোরে ড্রোন ব্যবহার করে আর্মড পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়।
অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ আটক করা হয় মিয়ানমারের নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর ভাই শাহ আলীকে। এ তথ্য জানিয়েছেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাইমুল হক।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে আরসা নেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর সঙ্গে তার ভাইয়ের যোগাযোগ ছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে কোনো ধরনের অপতৎপরতা আছে কিনা এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নাইমুল হক বলেন, ড্রোন দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে পরবর্তীতে শাহ আলীকে আটক করার সময় সেখানে চোখ বাধা অবস্থায় সাদিকুল নামে একজন ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। সাদিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তাকে সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন এবং টাকা দাবি করা হয়েছে। টাকা দিতে না পারলে তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়। পরবর্তীতে ওই স্থান থেকে অস্ত্র, ইয়াবা ও টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, আটক শাহ আলীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তাকে উখিয়া থানায় পাঠানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’ তাদের এক রিপোর্টে বলছে, সংগঠনটি মূলত গড়ে উঠেছে সৌদি আরবে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দ্বারা। মক্কায় থাকে এমন বিশ জন নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গা এই সংগঠনটি গড়ে তোলে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতে এদের যোগাযোগ রয়েছে।
সংগঠনটির নেতা আতাউল্লাহ ‘আবু আমর জুনুনি’ নামেও পরিচিত। আতাউল্লাহর বাবা রাখাইন থেকে পাকিস্তানের করাচীতে চলে যান। সেখানেই আতাউল্লাহর জন্ম। তিনি বেড়ে উঠেছেন মক্কায়। সেখানে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। ২০১২ সালে আতাউল্লাহ সৌদি আরব থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। এরপর ২০১৭ সালে আরাকানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর তার নাম শোনা যায়।
২০১৭ সালে মিয়ানমার জান্তা সরকারের রোষানলে পড়ে নিজের ভূখণ্ড ছেড়ে পালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয় লাখো রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য করা হয় ক্যাম্প। সেখানে বসবাসের শুরু থেকেই ‘আরসা’র নাম ব্যবহার করে নানা ধরনের অপকমের অভিযোগ পাওয়া যায়।
সর্বশেষ, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা কুতুপালং ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। তখন নিহত মুহিবুল্লাহর পরিবার থেকে অভিযোগ তোলা হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় মুহিবুল্লাকে আরসা’র সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে।
রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মনে করে, আতাউল্লাহ’র নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সংগঠনটি মূলত মিয়ানমার সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে। ২০১৭ সালে তারা মিয়ানমারের পুলিশ ক্যাম্পে হামলার পরই জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন, নিপীড়ন শুরু করে। এতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখো রোহিঙ্গা।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) নাইমুল হক বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এ পর্যন্ত তথাকথিত আরসা নামধারী ১১৪ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, চোরাচালানে জড়িত, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত আরও ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
Developed by:
Helpline : +88 01712 88 65 03