বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্ক আমরাও চাই

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৭:৪২ অপরাহ্ণ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক হোক- এটা আমরা সবাই চাই। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে, আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ইতি প্রকাশন’ এর উদ্যোগে ‘রাজনীতি: পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, সরকারকে বলছি, এই যে হাজার হাজার লোককে আহত করেছেন, গুলি করেছেন, মামলা করেছেন। আবার আগের মতো একই কায়দা মামলা করছেন। এসব করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যাবে না। এসব করে বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানাতে বানাতে এমন একটা পর্যায় নিয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামী। বাংলাদেশের মানুষ সবসময় তাদের অধিকার আদায় করে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। সেই সংগ্রাম শুরু হয়েছে, সেই সংগ্রাম অবশ্যই মানুষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তারা তা অর্জন করবে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খুব নাচতে নাচতে চলে গেলেন ভারতে। একটা মাত্র আশায় যে, ভারতে গিয়ে আবার কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় তার জন্যে একটা ব্যবস্থা তারা করে আসবেন। কী এনেছেন? কিছুই না। আমরা পরিস্কার করে বলছি, কী এনেছেন? ১৫৩ কিউসেক পানির কথা বলেছেন। এছাড়া তো কিছুই দেখছি না। যেদিন সমঝোতা স্মারক সই হয় সেইদিনই আমাদের সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে একজন ১৪ বছরের বালককে, আরো দুই জন নিখোঁজ আছে। এটা অহরহ ঘটছে। সেটা (সীমান্ত হত্যা) কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক হোক- এটা আমরা সবাই চাই। ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ। আপনারা (আওয়ামী লীগ সরকার) তো বলতে থাকেন যে, এমন পর্যায় আপনাদের সম্পর্ক গেছে, সেই সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক -আপনাদের মন্ত্রী বলেন। এই যে বিষয়গুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করতে করতে এবং মানুষ পুরোপুরিভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না, একটা জাতির নির্মাণ হতে পারে না।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গতকাল দেখলাম হাওরের ওপর দিয়ে উড়াল সেতু নির্মাণ করবে। সেখানে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বাজেট দিয়েছে। দেখবে সেটা পৌঁছাবে গিয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকায় নিসন্দেহে এবং এটার প্রয়োজন আছে কিনা, কতগুলো গাড়ি চলবে, ওখানে কী প্রয়োজন আছে তার সম্পর্কে কোনো কথা নেই। এই যে আপনার আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই সমস্ত মেগা প্রজেক্ট, অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্ট নিয়ে মূল জায়গা থেকে সরে ভিন্ন জায়গা চলে এসেছে। এখনো তারা বলে যে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া-এই অবস্থা হবে।

তিনি বলেন, যে এদেশে এখনো ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, দুই বেলা দুই মুঠো খেতে পারে না, যেদেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে পায় না, যাদের ছেলে-মেয়েরা এখনো বিএ-এমএ পাস করে কোনো কর্মসংস্থান নেই। তারা মোটরবাইক চালাচ্ছে, রিকসাভ্যান চালাচ্ছে, শ্রমিক ভ্যান চালাচ্ছে- সেখানে আপনি (সরকার) বলছেন, উন্নয়নের রোল মোডেল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। এই কথাগুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করে, মানুষের সঙ্গে পুরোপুরি একটা বেঈমানি করে গণতন্ত্র বিনাসী একটা শক্তি হয়ে উঠে- সমস্ত কিছু ধবংস করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকের যে অবস্থা –এটার জন্য দায়ী সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ, আজকে এই রাষ্ট্রের যে অবস্থা এটার জন্য দায়ী সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ, আজকে এই দেশে গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ, আজকে এই দেশে অর্থনীতিকে পুরোভাবে লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ। এই জাতিকে এই রাষ্ট্রকে তারা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে গেছে। আজকে কোথাও বিচার নেই, আইন শৃঙ্খলা ধবংস হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটা দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। কল্পনা করা যায় যে, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে যারা সেখানে কথার আগেই গুলি করে মারে, গুলি করে হত্যা করে। পাকুন্দিয়ায় যে ছেলেটাকে কাছে থেকে গুলি করেছে তার ফুসফুস ফুটো হয়ে গেছে, তার লিভার ফুটো হয়েছে, তার কিডনি ফুটো হয়েছে- এখনো বেঁচে আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে এবং ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, গ্রন্থের লেখক হারুন-অর-রশিদ ও প্রকাশক মো. জহির দীপ্তি বক্তব্য রাখেন।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...