দাম আকাশছোঁয়া, কমেছে বিক্রি : প্রযুক্তিপণ্যে অস্থিরতা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৭:৩৪ অপরাহ্ণ

সাধারণ মানের একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার কিনতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবন মার্কেটে এসেছিলেন ডেমরার ব্যবসায়ী বশির উদ্দিন। মনিটর বাদেই কোর-আইথ্রি সিরিজের কম্পিউটারের যে দাম দোকানিরা চাইছেন, তাতে চক্ষু চড়কগাছ বশিরের। ব্যবসায়ীদের দাবি, যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অস্থিরতা আর ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে তিন মাসে প্রযুক্তিপণ্যের দাম বেড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ। একই সঙ্গে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে সব পণ্যের বিক্রি কমেছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। লোকসান টেনে কুলাতে না পেরে অনেকেই ছেড়েছেন ব্যবসা। বাজার কবে স্থির হবে তার ধারণাও পাচ্ছেন না তারা।

রাজধানীর আইডিবি মার্কেট, মিরপুর-১০ নম্বর এবং এলিফ্যান্ট রোডের কম্পিউটার সিটি মার্কেটের প্রযুক্তিপণ্যের দোকান ঘুরে বাজারের এ পরিস্থিতি চোখে পড়েছে। তিন মাস আগের এবং বর্তমান দাম তুলনা করে দেখা গেছে, প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। মাউস, কি-বোর্ডের মতো খুচরা পণ্যের দামও বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, এইচপি ব্র্যান্ডের এম ২২এফ ২২ ইঞ্চি মনিটরের দাম ছিল ১২ হাজার টাকা, বর্তমানে ১৬ হাজার ৭০০ টাকা। তিন মাস আগে ইন্টেল কোর আই৫, ১১ জেনারেশনের প্রসেসরের দাম ছিল ১৬ হাজার টাকা, বর্তমান দাম ২২ হাজার ৫০০ টাকা। ইনটেল ১১ জেনারেশনের প্রসেসর, ৫১২ জিবি এসএসডি, ১৫.৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি ডিসপ্লে-সমৃদ্ধ এইচপির প্রোবুক ৪৫০ জি৮ মডেলের ল্যাপটপের দাম ছিল ৭৫ হাজার টাকা। সেটির বর্তমান দাম ৮৮ হাজার টাকা।

আসুস টিউএফবি ৬৬০ এম প্লাস মাদারবোর্ডের দাম ছিল ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ৭ হাজার টাকা বেড়ে পণ্যটি ২৫ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তোশিবা পি ৩০০, ১ টেরাবাইট হার্ডডিস্ক ছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা, যা হয়েছে ৪ হাজার ২৯০ টাকা। টিপি লিঙ্কের আর্চার সি৬ মডেলের রাউটার প্রায় ৫০০ টাকা বেড়ে এখন হয়েছে ৩ হাজার ৮৯০ টাকা। এভাবে প্রযুক্তি বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই বেড়েছে।

কোর আই-থ্রি জেনারেশনের যে ল্যাপটপের দাম ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা ছিল, সেটি ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা হয়েছে। ৩০ হাজার টাকার নিচে মিলছে না কোনো ধরনের ল্যাপটপ।

আইডিবি মার্কেটে কম্পিউটার কিনতে আসা বশির বলেন, সাধারণ কোর-আইথ্রি একটি কম্পিউটার বিল্ট করতে আগের চেয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি চাইছেন বিক্রেতারা। মে মাসেও আমার দোকানের জন্য কম্পিউটার কিনেছি। এখন যা বলছে তার সঙ্গে আগের দামের অনেক পার্থক্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো প্রযুক্তিপণ্যেও আগুন লেগেছে।

মূল্যবৃদ্ধি ও বিক্রি কমে যাওয়া নিয়ে আগারগাঁওয়ের কম্পিউটার সিটির টেক ভ্যালির সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ আবদুল্লাহ আমির ফাহাদ বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এলসিতে প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া আগে বাকিতে এলসি খোলা গেলেও সরকারের বর্তমান নীতির কারণে তা আর করা যাচ্ছে না। কম্পিউটার বিল্ট করতে খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। ল্যাপটপের দাম প্রায় ২০ হাজার টাকা বাড়তি। পুরো বাজারটাই অস্থিতিশীল। জুন-জুলাইয়ে আমাদের বড় একটা সেল হয়। কিন্তু এবারের বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। গ্রাহকরা একদম প্রয়োজন ছাড়া কিনছেন না। বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ঋণ করে ব্যবসা ধরে রাখছেন। যারা পারছেন না, তারা ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন।

ইউনিভার্সেল সিস্টেমের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সুজন অধিকারী জানান, আইডিবির অনেক দোকান খালি হয়েছে। কারণ বছরজুড়েই বাজার মন্দা। আবার জুন, জুলাইয়ের সেল বেশির ভাগ বিক্রেতাই মিস করেছেন। বড় কোম্পানির হিসাব আলাদা, ছোটরা ধারদেনা করে ব্যবসা চালাচ্ছে।

বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাইবার কমিউনিকেশনের মালিক নাজমুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ডলারের একটা প্রভাব আছে। সরকার এলসি মার্জিন শতভাগ করে দিয়েছে। এখন শতভাগ টাকা জমা দিয়ে পণ্য আনতে হচ্ছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো এলসি রিসিভ করে পণ্য পাঠাতে দু-তিন মাস দেরি করে। এ সময় পণ্যের দাম কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। আবার ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেটা আসতে আসতে আরো দাম বাড়ছে। তার ওপর ভ্যাটের বোঝা আছে। সব মিলে পণ্যের দাম ৫০ শতাংশের ওপর বেড়েছে। দাম এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ বলা যায়। সরকার বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য যে কেনাকাটা করত সেটা কমিয়ে দিয়েছে। এর বাইরে বড় কোম্পানি, এনজিও বা ব্যাংক তারাও তাদের বাজেট কমিয়েছে। এর তো প্রভাব পড়বেই। দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা এখন কিনছেন না। দাম কমবে ভেবে রয়ে সয়ে কিনছেন। এতে বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। আমাদের যে অফিস খরচ, পরিবহন খরচ, বেতন এগুলো কমাতে পারছি না, বরং বেড়েছে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...