জেলা পরিষদ নির্বাচন : সিলেটে সদস্য পদে বিজয়ী হলেন যারা

সিলেট অফিস,

  • প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ৪:৪৪ অপরাহ্ণ

সারাদেশের ন্যায় সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে উত্তাপহীণ জেলা পরিষদ নির্বাচন। সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত প্রতি উপজেলার নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। সিলেট জেলায় ১৩ টি কেন্দ্রে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চলে ভোটগ্রহণ। এবার ইভিএম তথা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ছিলো সিসি ক্যামেরা। ঢাকায় বসে সিসি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

ভোটগ্রহণের আগেই বিভাগের সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিছবাহুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটের আগেই নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে দুটি জেলায় শুধু সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকল পদে ভোট হয়েছে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায়।

এদিকে সুনামগঞ্জ জেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট খায়রুল কবির রোমেন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হুদা মুকুটের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ৮ ভোট বেশী পেয়ে বিজয়ী হন মুকুট। এর আগেও তিনি দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

অপরদিকে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী ঘোড়া প্রতীকে ৯৬১ ভোট পেয়ে অনায়াসে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্ধি জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মোল্লা আবু নঈম মো. শিবলী খায়ের আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৭৭ ভোট।

সিলেটে নির্বাচিত হলেন যারা: সিলেটের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের পরিষদে যোগ দিতে বিজয়ী হয়েছেন ৫ জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও ১৩ জন সাধারণ সদস্য। সোমবার ভোটগ্রহণ শেষে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী রিটার্নিং অফিসার।

বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী সাধারণ সদস্য পদে সিলেট জেলা পরিষদের
১নং ওয়ার্ডে (সদর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন) বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মাওলানা মো. মুছাদ্দিক আহমদ।
২নং ওয়ার্ডে (দক্ষিণ সুরমা উপজেলা) হাতি প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সৈয়দ মকবুল হোসেন টিউবওয়েল প্রতীকে পেয়েছেন ১০ ভোট।
৩নং ওয়ার্ডে (ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা) বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতা নাহিদ হাসান চৌধুরী ৩৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাহিদুর রহমান রুমান তালা প্রতীক নিয়ে ২৮ ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও আরেক প্রার্থী আবদুল আউয়াল কয়েস হাতি মার্কায় পেয়েছেন ২৪টি ভোট।
৪নং ওয়ার্ডে (বালাগঞ্জ উপজেলা) আওয়ামী লীগ নেতা টিউবয়েল প্রতীক নিয়ে লড়াই করে মো. নাসির উদ্দিন বিজয়ী হয়েছেন।
৫নং ওয়ার্ডে (ওসমানীনগর উপজেলা) আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামিদ সিএনজি অটোরিকশা প্রতীকে ৪৩টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
৬নং ওয়ার্ডে (বিশ্বনাথ উপজেলা) উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদ ৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি সহল আল রাজি চৌধুরী বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৩১ ভোট।
৭নং ওয়ার্ডে (গোলাপগঞ্জ উপজেলা) আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফয়জুল ইসলাম ফয়ছল বৈদ্যুতিক পাখা মার্কায় ৬৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বির মধ্যে বিএনপি নেতা এডভোকেট এম. মুজিবুর রহমান মুজিব তালা প্রতীকে পেয়েছেন ৩১, সমাজসেবী মো. ফজলুর রহমান জসিম ঘুড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ২৮ ও আওয়ামী লীগ নেতা স্যায়িদ আহমদ সুহেদ অটোরিকশা প্রতীকে পেয়েছেন ২৫ ভোট।
৮নং ওয়ার্ডে (বিয়ানীবাজার উপজেলা) খসরুল হক খসরু উট পাখি প্রতীকে ৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
৯নং ওয়ার্ডে (জৈন্তাপুর উপজেলা) মোহাম্মদ শাহজাহান টিউবওয়েল প্রতীকে ৫৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিদের মধ্যে মো. মুহিবুল হক তালা প্রতীকে ৪৯ ও মোহাম্মদ নুরুল আমিন অটোরিকশা প্রতীকে ১২ ভোট পেয়েছেন।
১০নং ওয়ার্ডে (গোয়াইনঘাট উপজেলা) সুবাস দাস হাতি প্রতীক নিয়ে বিজয় লাভ করেছেন।
১১নং ওয়ার্ড (কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের আংশিক) আওয়ামী লীগ নেতা আফতাব আলী কালা মিয়া অটোরিকশা প্রতীকে ৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন টিউবওয়েল প্রতীকে পেয়েছেন ৪৬ ভোট।
১২নং ওয়ার্ডে (কানাইঘাট উপজেলা) আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমদ পলাশ বিজয়ী হয়েছেন।
১৩নং ওয়ার্ডে (জকিগঞ্জ উপজেলা) ইফজাল আহমদ চৌধুরী টিউবওয়েল প্রতীকে ৬৫ পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিদের মধ্যে মোহাম্মদ শামীম আহমদ বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে ৪৯ ও আবদুর রহমান তালা প্রতীকে ৩ ভোট পেয়েছেন।
এদিকে সিলেট জেলায় সংরক্ষিত ৫ নারী ওয়ার্ডে নির্বাচিত যারা :
১নং ওয়ার্ডে (সিটি কর্পোরেশন, সদর, দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা) সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে বিপুল ভোটে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন এ জেড রওশন জেবিন রুবা। ওয়ার্ডে ২৯১ ভোটের মধ্যে বই প্রতীকে তিনি একাই পেয়েছেন ২৫৯ ভোট।
২নং ওয়ার্ডে (বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ^নাথ) সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য হিসেবে ফের নির্বাচিত হয়েছেন সুষমা সুলতানা রুহি।
৩নং ওয়ার্ডে (গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার) দ্বিতীয়বারের মতো সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন হাসিনা বেগম।
৪নং ওয়ার্ডে (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন ৪নং ওয়ার্ডে তামান্না আক্তার হেনা।
৫নং ওয়ার্ডে (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন মনিজা বেগম।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সিলেট জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিঞা দৈনিক জালালাবাদকে জানান, সিলেট জেলায় শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো ছিলো। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জ্যুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যবৃন্দ সর্বদা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশনারগণ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সিলেটের ভোটগ্রহণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...