জনবলের অভাবে নির্মাণের পাঁচ বছরেও চালু হয়নি দুই হাসপাতাল

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২২, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ৫৫ শতক জমির উপর প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দুটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়।

২০১৮ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে ভবন দুটি হস্তান্তর করেন। নির্মাণের পর শুধু মাত্র জনবল সংকটের কারণে ৫ বছর ধরে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ১০ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতাল দুটি চালু হচ্ছে না। কবে নাগাদ চালু হবে সে কথাও কেউ বলতে পারছেনা।

গত বুধবার ২৩ নভেম্বর মিরসরাই ইউনিয়ন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (মীরসরাই সাবসেন্টার) ও হিঙ্গুলী ইউনিয়ন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র হাসপাতাল দুটির ভিতরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিরসরাই পৌর সদরে মহাসড়ক সংলগ্ন ৫৫ শতক জমির উপর নির্মিত ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল। দুতলা হাসপাতাল ভবনের পাশে রয়েছে ফ্যামিলি কোয়াটার। চারিদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা।

প্রবেশ পথে রয়েছে নিরাপত্তা ফটক। ভিতরে রয়েছে ডেলিভারি রুম, ডক্টরস রুম, সয়েলড রুম, আই ইউ ডি রুম, আলট্রাসনো রুম, ১০ বেড ও ওয়ার্ড রুম , স্টোর রুম, ফার্মেসি, কিচেন, আসবাবপত্র ও মূল্যবান পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি। হাসপাতালের ভিতরে ওয়ার্ড রুম এবং ওটি রুম খুলে দেখা যায় মূল্যবান যন্ত্রপাতির নষ্ট হওয়ার অবস্থা।

জানা যায় হাসপাতাল দুটিতে থাকার কথা চিকিসক ২জন, মেডিকেল টেকনোলজি ১জন, নার্স ২জন, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ৪জন, ফার্মাসিস্ট ১ জন, অফিস-সহকারী ১জন, আয়া ১জন, ড্রাইভার ১ জন, পিয়ন ১জন, ও নিরাপত্তা প্রহরী ১জন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জানা যায়, উপ-সচিব আবু নূর মো. শামসুজ্জামান গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে একই অধিদপ্তরের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য রাজস্বখাতে অস্থায়ীভাবে উপরোক্ত স্টাফ নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন। এখনো সুপারিশকৃত পদগুলো পুরণ হয়নি। ৫ বছর ধরে চিকিৎসার আশায় শুধু ভবন দেখছে সেবা গ্রহিতারা।

বাজারের ব্যবসায়ী হারুন রশিদ বলেন, ৫ বছর আগে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ভেতরে বাহিরে সকল কাজ শেষ। বেড যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। মানুষ চিকিৎসা নিতে এসে ডাক্তার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। সরকারের উচিত তাড়াতাড়ি হাসপাতালটি চালু করা।

বারইয়ারহাট পৌরসভার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হিঙ্গুলী ইউনিয়ন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১০ শয্যার হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। এখানে প্রচুর রোগী আসে। চিকিৎসক ও মেডিসিন না পেয়ে ফিরে যায়। বেসরকারি হাসপাতালের খরচ বেশি। তাই মানুষ সরকারি হাসপাতালে আসে। ৫ বছর ধরে মানুষ ভবন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে। সবার প্রশ্ন চালু হচ্ছে না কেন।

মিরসরাই পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন জানান, আমার নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলো একটি হাসপাতাল করা। আমি মেয়ের হয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টার ফলে পৌরসভার নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য বেদখল হওয়া সরকারি জায়গা উদ্ধার করে হাসপাতাল ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করেছি। পুরোদমে হাসপাতালের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।

বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন বলেন, হাসপাতাল টি পৌরসভার মধ্যে। এখানে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মানুষ ফিরে আসে। ভবন হয়েছে ঠিক। সব ধরনের চিকিৎসা চালু করে ভবনের আসল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা জরুরি।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহ নুর বলেন, ১০ শয্যার হাসপাতাল দুটির ভবনের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগে। জনবল নিয়োগ না হওয়ায় প্রায় ৫ বছর চালু করা হয়নি। করোনার কারণেও বিলম্বিত হয়েছে। আশা করি খুব শিগগির চালু হবে। যেসব যন্ত্রপাতি নেই সেগুলোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান জানান, ভবনের কাজ শেষ। তবু দীর্ঘদিন কেন চালু হচ্ছে না দুটি ১০ শয্যার হাসপাতাল আমার জানা নেই। তবে মানুষের চিকিৎসা পেতে দ্রুত হাসপাতাল দুটি পুরোপুরি চিকিৎসা সেবা চালু করা দরকার। দুটি হাসপাতাল চালু হলে এলাকার প্রচুর রোগী চিকিৎসা পাবে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...