দেশে গম-ভুট্টার উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক কম

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২২, ৫:৫২ অপরাহ্ণ

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় দানাদার খাদ্যশস্য গম ও ভুট্টার চাহিদা বাড়ছে। ধানের চেয়ে কম খরচে অনেক বেশি উৎপাদন করা যায় এ দুটি ফসল। মুনাফাও দুই থেকে তিন গুণ বেশি। বছরে ফসল দুটির চাহিদা বাড়ছে ১৩ শতাংশ। গমের চাহিদা ৭৫ লাখ টন, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১২ লাখ টন। পাশাপাশি ভুট্টার চাহিদা ৭০ লাখ টন, উৎপাদন হচ্ছে ৫৫ লাখ টন। কারণ, কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী নতুন বীজ সরবরাহ করতে পারছে না বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট।

জানা গেছে , গম ও ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করে খাদ্য পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের আদলে দিনাজপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট। এর আগে এখানে ছিল গম গবেষণা কেন্দ্র। নতুন জাত উদ্ভাবন ও হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাক্ষর রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে কৃষকদের জন্য যে পরিমাণে বীজ প্রয়োজন, তা মেটাতে পারছে না। নতুন জাত সরবরাহ করতে না পারায় সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

তবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, উৎপাদিত গমের শতভাগ জাত নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো বিদেশি বা স্থানীয় কোম্পানি বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত জাতের সমকক্ষ নয়। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৩৭টি গমের জাত উদ্ভাবন করেছে। আর ভুট্টার জাত উদ্ভাবিত হয়েছে ২৯টি।

সূত্র জানায়, দেশে বার্ষিক ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টন গম বীজের বিপরীতে বিএডিসিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করে ১৮ থেকে ২০ হাজার টন বীজ। বাকি বীজ দেশি-বিদেশি কোম্পানি থেকে কিনতে হয় কৃষকদের। প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রতিবছর গমের প্রজনন বীজ সরবরাহ করা হয় মাত্র ৫০ টন। অথচ দেশে যে পরিমাণে গম আবাদ হয়, এ জন্য প্রজনন বীজ প্রয়োজন প্রায় ১৫০ টন। তবেই বীজের চাহিদা পূরণ সম্ভব।

সূত্র আরও জানায়, দেশে বার্ষিক ভুট্টার বীজের প্রয়োজন ১০ থেকে ১২ হাজার মে. টন। এর মধ্যে বিএডিসি উৎপাদন করে মাত্র ২০ থেকে ২৫ মে. টন। বাকি বীজ কৃষকরা দেশি-বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে কেনেন। অথচ প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২০০ মে. টন কৌলিক সারির বীজ সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। এই পরিমাণ কৌলিক সারির বীজ সরবরাহ করলে বিএডিসিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় বীজ সরবরাহ করতে পারবে। অথচ শুধু জমির অভাবে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে সেই বীজ পায় না।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের জমি আছে ১৯.৫ একর। ৫০ মে. টন গম বীজ উৎপাদনের জন্য প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ একর জমি ধার নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বীজ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে কিন্তু এ জন্য জমি প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় জমি প্রদান করা সম্ভব হলে প্রাথমিকভাবে বিএডিসিকে ২০০ টন কৌলিক সারির বীজ সরবরাহ করতে পারবে তারা।

এদিকে, গবেষণায় নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন হলেও সেগুলো সম্প্রসারিত হচ্ছে না। কৃষকরা তাদের চাহিদামাফিক গবেষণায় প্রাপ্ত উন্নত বীজ পাচ্ছেন না। তবে ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন বন্ধ ঘোষিত চিনিকলগুলোর হাজারে হাজার একর জমি পড়ে আছে। সেগুলো ইনস্টিটিউটের আওতায় আনলে গম-ভুট্টার উৎপাদন নিশ্চিত করা যাবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানিয়েছেন, গম ও ভুট্টার পুষ্টিমান ও উৎপাদন ধানের চেয়ে অনেক বেশি। মুনাফাও কমপক্ষে যথাক্রমে ২ ও ৩ গুণ বেশি। ধানে কীটনাশক ও পানির পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে গমের কম হয়। এক কেজি ধান উৎপাদন করতে প্রয়োজন হয় ৩ হাজার লিটার পানি, সেখানে সমপরিমাণ গমের জন্য প্রয়োজন ৪০০ থেকে ৫০০ লিটার। আর ভুট্টার লাগে ৭০০ থেকে ৮০০ লিটার।

দেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় বোরো ধান। চলতি মৌসুমে চালের গড় উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৮৯ টন। সেখানে গমের উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৩ দশমিক ৬৫ ও ভুট্টার উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ১০ দশমিক ২০ টন আর খরিপ মৌসুমে ৭ দশমিক ৭৫ টন।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহফুজ বাজ্জাজ বলেন, এ পর্যন্ত যেসব জাত উদ্ভাবন হয়েছে, সেসব উচ্চ ফলনশীল, রোগবালাই প্রতিরোধী, ভিটামিন ও জিংক সমৃদ্ধ, ব্লাস্ট ও মরিচা প্রতিরোধী এমন অনেক গুণাগুণ রয়েছে। নতুন বীজ উদ্ভাবনে আমাদের অনেক সাফল্য রয়েছে।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক বলেন, গম ও ভুট্টা চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমরা জনগণের পুষ্টির নিরাপত্তা ও দৈনন্দিন ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রেখে নতুন জাত উদ্ভাবন করছি। উচ্চ ফলনশীল, তাপসহিষ্ণু, দুর্যোগ ও রোগসহনশীল, ভিটামিন-সমৃদ্ধ জাতের পাশাপাশি মিষ্টি ভুট্টা, খই ভুট্টা, পপকর্ন ও বেবিকর্নের একাধিক জাত উদ্ভাবন করছি।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...