বিএনপির গণঅবস্থান ও আ’লীগের পাল্টা কর্মসূচী

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ

আবারো উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে রাজপথ। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি নতুন বছরের শুরু থেকেই শক্তির মহড়া দেখাতে চায়। আজ গণঅবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। ফাঁকা মাঠ ছাড়বে না আওয়ামীলীগও। আজ একইদিনে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ দখলের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

একইসাথে হুশিয়ারী দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। মঙ্গলবার মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির গণ-অবস্থানের নামে কোনো জনদুর্ভোগ সহ্য করা হবে না। ধ্বংসাত্মক কাজ হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
দুদলের রাজপথে অবস্থান ও সরকারের কড়া অবস্থানকে কেন্দ্র করে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। এ উত্তাপ সংঘাতে রূপ নেবে কি-না তা নিয়েই শঙ্কায় সাধারণ মানুষ।

গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল শেষে ১১ জানুয়ারী গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তারা। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এর আগে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি গণঅবস্থানে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে গঠন করা হয়েছে বিভাগভিত্তিক সমন্বয় টিম। এসব টিম সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলা, মহানগর ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ৪ ঘণ্টার এ কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপি ছাড়াও আজ মাঠে থাকবে আরও ৩৩ রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এবং আরও ১৫টি সংগঠনও থাকবে।

আজকের কর্মসূচীর পর নতুন কর্মসূচি নির্ধারণে সমমনা বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করছে বিএনপি। পরবর্তী কর্মসূচি হিসাবে আলোচনায় আছে জেলা টু জেলা লংমার্চ বা রোডমার্চ বা পদযাত্রা ও পথসভা এবং ঘেরাও কর্মসূচি। এছাড়া ২৫ জানুয়ারি ‘বাকশাল দিবস’ পালন করবে। ওইদিন সভা বা মানববন্ধন কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা করছে। তবে এখনো পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির সমাবেশগুলোতে মানুষের ঢল দেখে জনরোষের ভয়ে বিনা ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার ভয় পেয়ে গেছে। তাই তারা বিএনপির কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে অবৈধ সরকারের গদি রক্ষার চেষ্টা করছে। কিন্তু লাভ হবে না। জনতার ঢেউয়ে এসব বাধা উড়ে যাবে। শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এদিকে, আগের মতোই বিএনপির গণ-অবস্থানের দিনও রাজধানীতে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। এ ছাড়া ওই দিন সকাল থেকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীদের মিছিল ও ‘সতর্ক পাহারায়’ থাকতে বলা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এর আগে ১০ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত বিএনপির গণসমাবেশ এবং ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের দিনও আওয়ামী লীগ সমাবেশ ও মিছিল নিয়ে মাঠে ছিল। তবে এ দফায় আক্রমণাত্মক নয়, বিএনপিকে চাপে রাখার জন্য মাঠে থাকার নির্দেশনা রয়েছে বলে আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

আজ রাজধানীর মিরপুর ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান কর্মসূচি এবং সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এছাড়া প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে মিছিল এবং সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে সকাল থেকে রাজপথে থাকবে আওয়ামীলীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও। দলটির নেতারা বলছেন, তাদের এসব কর্মসূচি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নয়। তাদের দাবি-কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যেই তারা সতর্ক পাহারায় থাকবেন।

আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আমরা পালটাপালটি কর্মসূচিতে বিশ্বাসী নই। আমরা পালটাপালটি কর্মসূচি দেই না, দিচ্ছিও না। তবে কেউ যদি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, দেশ ও জনগণের ক্ষতি করতে চায়, তাহলে তো জনগণের রাজনৈতিক দল হিসাবে বসে থাকার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারা সতর্ক থাকবেন। কেউ যেন কর্মসূচির নামে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, তারা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। রাজপথে থাকবেন।

আওয়ামীলীগ নেতারা বলছেন, নাশকতার আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ামাত্র প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নেতাকর্মীরাও প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন।
এদিকে দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান বিষয়ে সুজন সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্নেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার চলাফেরা, সভা-সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করা- সংবিধান অনুযায়ী এগুলো মৌলিক অধিকার। এগুলোতে বাধা দেওয়া সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এগুলো কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার প্রতিফলন। এ ধরনের আচরণ দেশ, গণতন্ত্র ও দলের জন্য কখনোই মঙ্গলজনক নয়। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ দখল বা শক্তি প্রদর্শনই সমস্যার সমাধান হবে না; সংকট উত্তরণের পথ বের করতে হবে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...