চট্টগ্রাম বন্দরে ১৩৫ বছর পর ভিড়েছে বড় জাহাজ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ৩:২৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্ঠার ১৩৫ বছর পর ভিড়েছে বড় জাহাজ। বড় জাহাজ ভেড়ানোর ফলে সক্ষমতা অর্জন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এছাড়া বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়বে। বন্দর কর্তৃপক্ষের বড় জাহাজ ভিড়ানোর এই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিসহ আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার দুপুরে বেলুন উড়িয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি (চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল)-এর ১ নম্বর জেটিতে ভিড়ানো হবে ১০ মিটার দৈর্ঘ্যের ‘কমন এটলাস’ নামের কার্গো জাহাজটির ভিড়ানোর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের ভাণ্ডার ভবন এলাকায় নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন।

জানা যায়, মার্শাল আইল্যান্ডসের পতাকাবাহী ‘কমন এটলাস’ নামের কার্গো জাহাজটি মেঘনা গ্রুপের আমদানি করা ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি নিয়ে ব্রাজিলের সন্তোস বন্দর থেকে গত ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে এতদিন যে ধরনের জাহাজ ভিড়ানো হতো শিপিং বাণিজ্যে সেগুলোকে মাঝারি আকৃতির জাহাজ বলা হয়। ১৯০ মিটার লম্বা বা ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজে ২২শ থেকে ২৬শ টিইউএএস কন্টেনার বোঝাই করা যায়। মাত্র আধা মিটার ড্রাফট বৃদ্ধি এবং ১০ মিটার ল্যান্থ বৃদ্ধি করে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০শ মিটার ল্যান্থের জাহাজে ৩৮শ টিইইউএস পর্যন্ত কন্টেনার বোঝাই করা যায়। ১০ মিটার ল্যান্থ বাড়ার কারণে গড়ে ১ হাজার কন্টেনার বাড়তি পণ্য বোঝাই করার সুযোগ তৈরি করবে। দুইশ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজকে ‘বড়’ জাহাজ বিবেচনা করা হয়। চট্টগাম বন্দরে আজ থেকে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২শ মিটার ল্যান্থের জাহাজ ভিড়বে। যেখানে খোলা পণ্যবাহী জাহাজে বর্তমানের তুলনায় গড়ে ১০ হাজার টনের বেশি খোলা পণ্য এবং গড়ে ১ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বেশি পরিবহন করা সম্ভব হবে। আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে তা গতি বাড়বে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহন খরচ কমাবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দর জেটিতে সরাসরি ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানোর ফলে কন্টেইনার জাহাজের ক্ষেত্রে ১১শ টিইইউএস কন্টেইনার বেশি পরিবহন করা যাবে। পাশাপাশি, বাল্ক কার্গো জাহাজে ১৫ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন খোলা পণ্য বেশি পরিবহন করা যাবে। ফলে আমদানিকারকরা সরাসরি জেটিতেই পণ্য খালাস করে নিতে পারবে। ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটি, সিসিটি ও এনসিটি জেটিতে সরাসরি বড় জাহাজগুলো ভিড়তে পারবে। এতে জাহাজ জটের কোন শঙ্কা থাকছে না।

জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে বন্দর চ্যানেলে গভীরতা কম থাকায় সাড় ৯ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজ বন্দরের মূল জেটিতে ভিড়তে পারতো না। তাই এতদিন খোলা পণ্যবাহী বিশেষ করে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল, গম, সার, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, চিনি, সার, খাদ্য পণ্য, স্ক্র্যাপ, কয়লা সহ বিভিন্ন পণ্য বহিনোঙরে ছোট আকৃতির (লাইটার) জাহাজে পণ্য খালাস করতে হতো।

বন্দরের বহিনোঙর থেকে বছরে প্রায় ৫ কোটি টন পণ্য পরিবহন হয়। এরমধ্যে ৭০ ভাগ পণ্য বাল্ক জাহাজ থেকে ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজে খালাস করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। বাল্ক জাহাজে একসঙ্গে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টন পণ্য পরিবহন হয়। আর লাইটার জাহাজের ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার থেকে ২ হাজার টন পর্যন্ত। একটি বড় জাহাজ থেকে পণ্য নিতে ২০ থেকে ২৫টি লাইটারের প্রয়োজন। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৮০০ লাইটার জাহাজ পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া বাকি ৩০ ভাগ কনটেইনার পণ্য টাগবোটের সাহায্যে সরাসরি আনা হয় বন্দরের জেটিতে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বড় জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম শুরু করছি। শুরুতে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল, চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল এবং ১০, ১১ ও ১২ নম্বর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২শ মিটার লম্বা বড় জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম শুরু হবে, যা দেশের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

উল্লেখ্য, ১৮৮৭ সালে পোর্ট কমিশনার্স অ্যাক্ট প্রণয়ন করে ব্রিটিশ সরকার। ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল তা কার্যকর হয়। ইতোমধ্যে ১৩৫ বছর গত হয়েছে। মাত্র দুটি মুরিং টাইপের জেটি নিয়ে যে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল দিনে দিনে তা বিশাল কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানে দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। বছরে গড়ে চার হাজারের বেশি জাহাজের আনাগোনা এই বন্দরে। গত বছর ৩২ লাখ টিইইউএসের বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৬০ মিটার লম্বা এবং ৭.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো হতো। ১৯৮০ সালে এসে প্রথম ১৭০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে এসে ড্রাফট না বাড়িয়ে ল্যান্থ বাড়িয়ে ১৮০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেয়া শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে এসে শুরু হয় ১৮৬ মিটার লম্বা এবং ৯.২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। ২০১৪ সালে এসে বার্থিং দেয়া হয় ১৯০ মিটার লম্বা এবং ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। প্রায় দশ বছর পর আজ থেকে নতুন করে ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...