কাজ শেষে সাড়ে চার কোটি টাকা ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন ছাত্রলীগ নেতার

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ৯:৪১ অপরাহ্ণ

 

ছাত্রলীগ নেতাদের নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতা, দেশপ্রেম নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এরই মাঝে সরকারি প্রকল্পের প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চট্টগ্রামের এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তাঁর নাম মো. আবু তৈয়ব। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

সচরাচর সরকারি প্রকল্পে ব্যয় বাড়নোর প্রবণতা লক্ষ করা যায়। আবার ঠিকাদার কিংবা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ কম করে টাকা ভাগিয়ে নেওয়ার কথাও বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। কিন্তু প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে মানসম্মত কাজ করে আবার উদ্বৃত্ত মোটা অংকের টাকা সরকারকে ফেরত দেওয়ার নজির হয়তো খুঁজেই পাওয়া যায় না। তবে এমন নজির স্থাপন করেছেন চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আবু তৈয়ব।

নগরের বায়েজিদে সেনানিবাসের পাশে ‘বায়েজিদ সবুজ উদ্যান’ নামে একটি পার্ক গড়ে তুলেছে গণপূর্ত বিভাগ। প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ২০১৭ সালের এপ্রিলে কাজটি পান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়বের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মানসস্মতভাবে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকায় কাজ শেষ করে বাকি ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা গণপূর্ত বিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছেন আবু তৈয়ব।

কাজ শেষে গত মঙ্গলবার পার্কটি উদ্বোধন করেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সব ঠিকাদাররা খারাপ না। ভালো ঠিকাদারও রয়েছে গণপূর্তে। এর প্রমাণ হচ্ছে আবু তৈয়ব। বায়েজিদ উদ্যান নির্মাণ শেষে চার কোটির বেশি টাকা ফেরত দিয়েছে সে।’

এর পর থেকে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে থাকে। ছাত্রলীগের চলমান কর্মকাণ্ডের মধ্যে আবু তৈয়বের এই কাজ প্রশংসার দাবি রাখে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবু তৈয়ব বলেন, ‘আমি মানসস্মতভাবে কাজ করে পার্কটি তৈরি করেছি। আমার যত টাকা খরচ হয়েছে বা যত লাভ করা উচিত তা করে বাকি টাকা ফেরত দিয়েছি। কেন আমি রাষ্ট্রের টাকা অপচয় করব? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চান সেখানে আমাদেরকেও অংশীদার হতে হবে।’ এ জন্য যার যার অবস্থান থেকে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সাবেক ছাত্রনেতা আবু তৈয়বের প্রশংসা করে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গণি বলেন, ‘এ ধরনের কাজ প্রশংসার দাবিদার এবং একটি দৃষ্টান্তও বটে। নতুন যারা ছাত্রলীগ করবে বা ব্যবসা-বাণিজ্য করবে তাদের কাছে এটি অনুপ্রেরণা। তাঁকে অনুসরণ করা উচিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘মূলত দুঃসময়ে যারা রাজনীতি করে তাদের মধ্যে দলের প্রতি বিশেষ আনুগত্য ও ভালোবাসা থাকে। ফলে দলের দুর্নাম হয় এমন কোনো কাজ তারা করে না।’

ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি ইউনিটের সদস্যদেরকে তৈয়বকে অনুসরণ করার আহ্বান জানান তিনি।

গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পের টাকা বাঁচিয়ে ঠিকাদার আবু তৈয়ব গণপূর্ত বিভাগে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এমন ঘটনা সচরাচর হয় না।

উল্লেখ্য, দুই একর জমিতে গড়ে ওঠা বায়েজিদ সবুজ উদ্যানে ৪১ প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। রয়েছে বসার বেঞ্চ, হাঁটার পথ, শিশুদের রকমারি খেলনা ও আলোকসজ্জিত পানির ফোয়ারা।

পুরো উদ্যানে দুটি ফটক রয়েছে। বসার বেঞ্চ আছে একক ৩৯টি, দ্বৈত ৭টি। ৬০ ফুট ব্যাসের জলাধারের দুই পাশে উন্মুক্ত গ্যালারি রাখা হয়েছে। জলাধারে পানি রাখা হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট। পার্কে আসা লোকজনের জন্য নারী-পুরুষের আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাগানে সবুজ ঘাসে ও গাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটানোর জন্য রয়েছে ৬০টি স্প্রিঙ্কলার। পুরো উদ্যানে ১০৮টি কম্পাউন্ড লাইট, ১৬টি গার্ডেন লাইট ও ৫৫টি ফাউন্টেন লাইট রয়েছে। ব্যস্ত এই নগরে অট্টালিকার ভিড়ে এ যেন এক নৈসর্গিক আয়োজন !

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...