সব
স্বদেশ বিদেশ ডট কম
রাজনীতি, ব্যবসা, চাকরি কিংবা অন্য কোনো পেশা হোক-অল্প দিনের মধ্যে ধনী হওয়ার স্বপ্ন বেশিরভাগ মানুষের। কিন্তু ভালোবাসার টানে বা ভালো কাজ করতে গিয়ে নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না- এমন মানুষও আছে এই সমাজে।
এমন একজন মানুষের সন্ধান মিলেছে রংপুর মহানগরীর বুড়িরহাট বাহাদুর সিংহ এলাকায়। সহিদার রহমান নামের মানুষটি নিজের তেমন কিছু না থাকলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে প্রতি ভালোবাসার টানে কত কিছুই না করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত ২০ বছর কাফনের কাপড় পরে কাটিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘদিন। দাফনের আগে বঙ্গবন্ধুকে ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল করানো হয়েছিল বলে সারা জীবন ওই সাবান দিয়েই গোসল করছেন সহিদার রহমান।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনায় প্রত্যেক কোরবানি ঈদে পশু কোরবানিও দেন সহিদার। প্রায়ই আয়োজন করেন বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার শান্তি ও শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া মাহফিলের। এবারের ঈদেও শেখ হাসিনার নামে ৩১তম গরু কোরবানি দিয়েছেন ডা. সহিদার।
মুক্তিযোদ্ধা সহিদার রহমান অবসরপ্রাপ্ত একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি একজন পল্লী চিকিৎসকও। এ কারণে এলাকায় ডা. সহিদার নামে পরিচিত তিনি। বয়স প্রায় ষাটের কোঠায়। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত। যেখানেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কিংবা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা সেখানেই সহিদার রহমান। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর নৌকার প্রতি বিরল ভালোবাসা রয়েছে তাঁর। কথায়, পোশাকে কিংবা চলনে-বলনে যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারেন সহিদার রহমান একজন নৌকার নিবেদিত প্রাণ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ১৯৯০ সালের ১৫ আগস্ট শরীরে কাফনের কাপড় পরেন সহিদার রহমান। ওই অবস্থায় ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ২০ বছর পর ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের দিন শরীরের কাফনের কাপড় নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। এর পর ওইদিনই গায়ে তোলেন ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি সম্বলিত টি-শার্ট, যার সামনের অংশে লেখা ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর কর-করতে হবে’। আর অন্য অংশে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই-করতে হবে’। ওই বছর ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে খুনিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার সংবাদ রাতভর ঘরে বসে টেলিভিশনের পর্দায় উপভোগ করেন সহিদার রহমান।
পরদিন সকালে রংপুর শহরে সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ মিছিলে যোগ দেন সহিদার। সেখানেই দাবি সম্বলিত গায়ের টি-শার্ট খুলে পুড়িয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন। এসময় সহিদার সবার সামনে বলেছিলেন, ‘এ্যালা মুই মরিয়াও শান্তি পাইম।’ তবে এখনও চাপা ক্ষোভ সহিদারের মনে। বঙ্গবন্ধুর আরো খুনি যারা দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন তাদেরকে দেশে এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
একসময় গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতরে পৈত্রিক ভিটা হলেও বর্তমানে রংপুর নগরীর বুড়িরহাট বাহাদুর সিংহ এলাকার বাসিন্দা সহিদার রহমান। সংসারে স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও তিন মেয়ে।
সহিদারের স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া জানান, তাঁর স্বামী সহিদার বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। সারাটা জীবন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করেই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে নানাজনে নানা কটূক্তি করলেও তিনি কখনো দমে যাননি। সংসারের ক্ষতি সহ্য করে হলেও তিনি বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে চলেছেন।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি সহিদারের এমন ভালোবাসা দেখে রংপুর সদরের পরশুরাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছিল সহিদারকে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও গঙ্গাচড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুপাগল সহিদার রহমান অভাব-অনটনের মধ্যে থেকেও দমে যাননি কখনও। ভালোবাসার নজির দেখিয়েছেন। এমন বিরল ভালোবাসার জন্য সত্যিই প্রশংসার দাবিদার তিনি।’
১৯৯০ সালে ঈদুল আজহায় প্রথম প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনায় গরু কোরবানি দেন সহিদার। তখন তিনি অঙ্গীকার করেন যতদিন বাঁচবেন-ততদিন প্রতি ঈদুল আজহায় শেখ হাসিনার নামে গরু কোরবানি দেবেন। অঙ্গীকার অনুযায়ী এবারের ঈদুল আজহায় দিয়েছেন ৩১তম গরু কোরবানি। তাঁর আরেকটি অঙ্গীকার হলো সারাজীবন ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল করা। এমনকি পরিবারের সবাইকে বলে দিয়েছেন মৃত্যুর পর যেন তাঁকে ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে দাফন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে সহিদার রহমান জানান, মৃত্যুর পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল করানো হয়েছিল। সে কারণে তিনি সারাজীবন ওই সাবান দিয়েই গোসল করার অঙ্গীকার করেন।
সহিদার রহমান আরো জানান, জীবনে তাঁর তিনটি অঙ্গীকার রয়েছে। এর মধ্যে ২০ বছর ধরে পরা কাফনের কাপড় খুলে ফেলেছেন। কারণ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। অন্য দুটি অঙ্গীকার অনুযায়ী ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল করছেন ৩১ বছর ধরে, জীবনের শেষ দিনও এভাবে চলবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কোরবানিও দেবেন বেঁচে থাকা অবধি। জীবনের পড়ন্তবেলায় এসে বঙ্গবন্ধুপাগল এই মুক্তিযোদ্ধার শেষ ইচ্ছা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা।
সূত্র: কালেরকন্ঠ।
Developed by: Helpline : +88 01712 88 65 03