সিনহা হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন ২৩ আগস্ট

কক্সবাজারের টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোঃ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার সকাল ১০ টেকনাফের বাহারছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয় এই গণশুনানি। এর আগেই সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শীকে নিবন্ধন করে গণশুনানির নির্দিষ্ট কক্ষে নিয়ে যান তদন্ত কমিটি।

বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৯ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে সিনহা হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। ১১ জনকে সাক্ষী তালিকাভুক্ত করা হলেও দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মনে না হওয়ায় তাদের সাক্ষ্য নেয়নি তদন্ত কমিটি।

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এই ৯ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তারা সেই দিনের ঘটনা সম্পর্কে যা অবলোকন করেছেন তা ই আমাদের জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করার হয়েছে। স্বাক্ষীদের বক্তব্য মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ হত্যার ঘটনায় চলমান তদন্ত কার্যক্রম শেষে প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা হবে। এই হত্যা মামলায় প্রয়োজন হলে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আমাদের গণশুনানীর এই অংশ কাজে লাগাতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, মেজর (অব.) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় আমাদের কমিটি বিশদ পরিসরে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তদন্তের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে টেকনাফ থানা পুলিশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এবিপিএন) সদস্যদের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘটনাস্থলের আশেপাশের লোকজন; যারা প্রত্যক্ষদর্শী বলে প্রতীয়মান হয়েছে তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তবুও আরও বৃহৎ পরিসরে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্যই এই গণশুনানীর আয়োজন করা হয়।

শুনানীতে সাক্ষ্য দিতে নিবন্ধনভুক্ত ১১জনই টেকনাফ বাহারছড়া শামলাপুর এলাকার বাসিন্দা। শুনানীতে তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্ণেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি উপস্থিত ছিলেন।

গণশুনানী শেষে সাংবাদিকদের দেয়া ব্রিফিংয়ে কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষের পথে। অবশিষ্ট কার্যক্রম শেষ করে আগামী ২৩ আগস্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মেজর (অব.) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোঃ রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।

এর মধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পুলিশের চার সদস্য এবং এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গত শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র‌্যাব।

এর আগে একই ঘটনায় টেকনাফ থানায় দুইটি, রামু থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। এই ৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছে সিনহার সঙ্গি সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রাণী দেবনাথকে। তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

[১] [২] [৩]