সিলেটে প্রকৃতির সৌন্দর্য ঘেরা লন্ডনপ্রবাসীর ট্রি-টপ অ্যাডভেঞ্জার

প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের রূপ-রহস্যে ঘেরা ট্রি-টপ অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ফার্ম। সিলেটের লন্ডনপ্রবাসী এক ব্যারিস্টারের স্বপ্নে গড়া ভুবন। যেখানে পাহাড়-টিলার সৌন্দর্যকে অক্ষুণ্ন রেখে নাগরিক জীবনকে প্রশান্তি দিতে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে এ স্বপ্নপুরী। যান্ত্রিক নগর জীবনে মানসিক নানা যাতনা দূর করতে সিলেট নগরের বাইরে গড়ে ওঠা ফার্মটি ভ্রমণপিপাসুদের আদর্শ স্থানে পরিণত হচ্ছে। যারা সবুজ ভালোবাসেন, পাহাড়-টিলায় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন; তাদের জন্য নীলচে পানির উপর ঝুলন্ত সেতুসহ বৃষ্টি উপভোগের ব্যবস্থা রেখে ২৮ বিঘা জমিতে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে।

প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতার পাহাড়-টিলার ভাঁজে ভাঁজে রোপণ করা হয়েছে ১০ সহস্রাধিক ঔষুধি, বনজ ও ফলদ গাছ। এর মধ্যে প্রায় ২০টি বিরলপ্রজাতির গ্র্যাভিওলা রয়েছে। এখানে আছে শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ট্রি-টপসসহ নানা খেলাধুলা ও ক্যাম্পিং ব্যবস্থা। রয়েছে সাড়ে তিনশ ফুট দীর্ঘ জিপ লাইন ও হর্স রাইডিংয়ের ব্যবস্থা, যা রোমাঞ্চপ্রিয়দের অন্যতম আকর্ষণ।

সিলেট শহরতলির খাদিমনগর ইউনিয়নের লিলাপাড়া এলাকায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম ২০১৯ সালের শুরুর দিকে পরিবেশবান্ধব ফার্মটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। তার মূল উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন নয়, মূলত পারিবারিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। বন্ধু-বান্ধব এবং শুভানুধ্যায়ীদের জন্য এর দুয়ার খোলা। বিমানবন্দর সড়ক ধরে সাহেবেরবাজার যাওয়ার আগেই লিলাপাড়ায় এ রোমাঞ্চকর রিসোর্টের দেখা মিলবে। সিলেট নগর থেকে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মাত্র ২০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়।

সিলেট নগর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফার্মে রয়েছে বাঁশের গ্যালারি, হাওয়াখানা, চারটি কটেজ, একটি ট্রি-হাউস, একটি বাংলো বাড়ি, একটি উন্মুক্ত অডিটোরিয়াম, ক্যাম্পিং মাঠ, একটি বড় পুকুর, পুকুরের মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপ। দ্বীপে যাওয়ার জন্য আছে ঝুলন্ত ব্রিজ। পুকুরের উপর দিয়ে গেছে ৩২৫ ফুট লম্বা জিপলাইন, শিশুদের জন্য ট্রি-টপসহ রোমাঞ্চকর খেলাধুলার বিশেষ ব্যবস্থা।

এখানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সরকারি দলের তিন সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের একটি দল ছয় মাস আগে বৈঠক করে। তারা সিলেটের সৌন্দর্য সম্পর্কে অবগত হন। পরিবেশবান্ধব এমন একটি উদ্যোগ নেওয়ায় ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম পরিবারকে অভিনন্দন জানান।

ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশে এলে তাদের বাচ্চাদের নিয়ে দেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, শিল্প, সংস্কৃতি দেখাতে ও ভালো সময় কাটাতে পারেন। সে লক্ষ্য নিয়েই এটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্য ঢেঁকি বসিয়েছি। আছে অনেক দেশি-বিদেশি বিরল প্রজাতির গাছ। কেউ চাইলে এখানে পরিবার নিয়ে রাত যাপন করতে পারবেন। রাতে পূর্ণিমা, পরিবেশ, প্রকৃতি, পাহাড়, টিলা উপভোগ করতে পারবেন। বাংলোসহ কটেজগুলো আকর্ষণীয় করে নির্মাণ করা হয়েছে। আছে শীতাতপ ব্যবস্থাও। এখানে কাপ্তাইয়ের পর দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ ও জিপলাইন আছে। এগুলো যে কাউকেই আকৃষ্ট করবে। শিশু-কিশোরদের ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত করে তুলতে আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে।’

বিলাসবহুল প্রবাস জীবন রেখে এখানে পাহাড়-টিলায় কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রিসোর্ট করা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি গোলাপগঞ্জের আমকোনা গ্রামে। আমাদের এলাকাও পাহাড়-টিলা ঘেরা। ছোটবেলা থেকে দেখেছি বাবা (হাজি জমসেদ আলী) পরিবেশ প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতেন। তিনি ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর মারা যান। এরপর আমরা চার ভাই ও দু’বোন মিলে সিদ্ধান্ত নেই যে, আমাদের এই পৈতৃক জমিতে পরিবেশবান্ধব কিছু করব। বাবার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই পাহাড়-টিলা না কেটেই আমরা এখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করি। বাবা বৃক্ষ ভালোবাসতেন। তাই এখানে বিরল প্রজাতির ১০ হাজার গাছ লাগিয়েছি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘সিলেটের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যখন পাহাড়-টিলা কাটার হিড়িক চলছে, সে সময়ে প্রবাসী পরিবারটি পাহাড়-টিলা রক্ষা করে দৃষ্টিনন্দন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।’

ব্যারিস্টার মইনুল ইসলামের স্ত্রী মনোজাহা পলি ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের নিয়ে সিলেট বেড়াতে এলে ভালো মানের পরিবেশ ও শিশুবান্ধব কোনো জায়গা খুঁজে পাই না। এখানে আমরা শিশুদের মনোবিকাশের উপযোগী করে ট্রি-টপসসহ বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা রেখেছি। এখানে এলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপকার হবে। তারা প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে উপভোগ করবে বিভিন্ন ধরনের অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটি।’

লেখক : সাংবাদিক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

[১] [২] [৩]