নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, কেন?

কোনো কাজ না করে, খুব স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে? মনে হচ্ছে, অনেক চেষ্টা করেও যথেষ্ট বাতাস আপনি ফুসফুসে নিতে পারছেন না? একটু অপেক্ষা করুন। আপনার এমন সমস্যার পেছনে যদি ঠান্ডা লাগা বা এ রকমের কিছু কারণ থেকে থাকে তাহলে ব্যাপারটি আলাদা। তবে, তেমনটা যদি না হয়, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার সমস্যা যদি আপনার প্রাত্যাহিক জীবনের অংশ হয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে একটু গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপারটিকে দেখুন।

কেন এমন হচ্ছে আপনার? খুব কি বড় কোনো সমস্যা? নিঃশ্বাস নিতে না পারার এই সমস্যাকে ডাক্তারি ভাষায় ডিস্পনিয়া বলা হয়। সমস্যাটি সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানতে পড়ে নিন এই লেখাটি-

ডিস্পনিয়া কী?

নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, কম বাতাস নিতে পারার সমস্যাকে ডিস্পনিয়া বলা হয়। এটি কোনো কারণ ছাড়া হয় না। মূলত, বড় কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হিসেবে ডিস্পনিয়া হয়ে থাকে। সুস্থ মানুষ সাধারণত এমন শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন না। তাই, এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে সেটাকে গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিত।

কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে?

ডিস্পনিয়াতে আক্রান্ত হলে আপনার মধ্যে যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে-

১। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ২। বুকে ভারী কোনো চাপ অনুভব করা বা বুকব্যথা করা ৩। দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হওয়া

ডিস্পনিয়ার রকমভেদ :

ডিস্পনিয়া দুই রকমের হতে পারে। ১। অ্যাকিউট ডিস্পনিয়া ২। ক্রনিক ডিস্পনিয়া

অ্যাকিউট ডিস্পনিয়া-

অ্যাকিউট ডিস্পনিয়া বা অ্যাকিউট শর্টনেস অব ব্রিদ মূলত হুট করে হওয়া শ্বাসকষ্টকে বোঝায়। আপনি যদি একটু পর পর, কখনো কখনো নিঃশ্বাস নিতে কষ্টবোধ করেন। সে ক্ষেত্রে সেটাকে অ্যাকিউট ডিস্পনিয়া বলা যায়। কয়েকটি কারণে এর পেছনে কাজ করতে পারে। সেগুলো হলো-

● উদ্বিগ্নতা ● নিউমোনিয়া ● গর্ভধারণ ● হার্ট অ্যাটাক বা হৃদপিণ্ড কাজ বন্ধ করে দেওয়া ● কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং ● ওষুধ সেবন ● ব্লাড ক্লট ● কিডনি কাজ না করা এবং নিম্ন রক্তচাপ ইত্যাদি

ক্রনিক ডিস্পনিয়া-

ক্রনিক ডিস্পনিয়া বলতে মূলত নিয়মিত শ্বাস নেওয়ার কষ্টকে বোঝায়। অ্যাকিউট ডিস্পনিয়ার মতো ক্রনিক ডিস্পনিয়ার পেছনেও রয়েছে বেশ কিছু কারণ। সেগুলো হলো-

● অ্যালার্জি ● স্থূলতা ● হাঁপানি ● ফুসফুসের কোন সমস্যা ● ফুসফুসের ক্যান্সার ● উচ্চ রক্তচাপ এবং ● হৃদপিণ্ডের কোনো সমস্যা ইত্যাদি

তবে এছাড়াও ফুসফুসের সাথে জড়িত যে কোনো সমস্যাই শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার পেছনে কাজ করতে পারে। ক্রনিক ডিস্পনিয়া যদি একমাস অব্দি থাকে, তাহলে সেটিকে গুরুত্ব দিন এবং চিকিৎসকের সাথে দেখা করুন। অন্যদিকে, হুট করে হওয়া শ্বাসকষ্ট বড় কোনো ঝামেলা তৈরি করতে পারে বিধায়, এ ব্যাপারে আরও মনযোগী হোন।

শ্বাসকষ্টের এমন সমস্যায় কী করবেন?

আপনি যদি শ্বাস নিতে অল্প অল্প কষ্টবোধ করেন সে ক্ষেত্রে কিছু ব্যাপার মেনে চলতে পারেন। এই যেমন-

● নিয়মিত শরীরচর্চা করা। এতে করে ফুসফুস আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যাগুলো দূর হবে। ● ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন। ● খুব বেশি এবং দ্রুত হাঁটাচলা করা থেকে বিরত থাকুন। ● ওজন অনেকসময় শারীরিক নানা সমস্যার কারণ হিসেবে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে, আপনার ওজন যদি একটু বেড়ে যায় তাহলে সেটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন। ● দূষণ সবখানেই থাকবে। তবে চেষ্টা করুন এই দূষণ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে।

তবে আপনার শ্বাসকষ্টের সাথে যদি-

বুকব্যথা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, জ্বর বা কাঁপুনি, সর্দি, হাঁচি ইত্যাদি দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে নিকটস্থ কোনো চিকিৎসকের সাথে দেখা করুন।

নিঃশ্বাস নিচ্ছি বলেই আমরা বেঁচে আছি। তাই এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন এবং নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখুন। এতে করে বড় রকমের সমস্যার হাত থেকে মুক্ত থাকা যাবে সহজেই।

মূল লেখক : ডক্টর চিউ হাক চীন, মাউন্ট এলিজাবেথ নভেনা হসপিটাল।

[১] [২] [৩]