স্কুল খুলতে একগুচ্ছ নির্দেশনা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২:০৬ অপরাহ্ণ

করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার বিদ্যালয় খুলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তাই নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের মাধ্যমে বিদ্যালয় পুনরায় চালুর নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নির্দেশিকা স্কুল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকে নির্দেশ দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম শিশুর শিখন যোগ্যতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা, যারা বেশি সময় বিদ্যালয়ের বাইরে থাকবে, তাদের বিদ্যালয়ে ফেরার সম্ভাবনা ততই কমে যাবে। প্রাথমিক স্তরে ধনী শিশুদের তুলনায় দরিদ্র শিশুদের ঝরে পড়ার হার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুদের মাঝে বাল্যবিবাহ, অপ্রাপ্ত বয়সে মাতৃত্ব, যৌন নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হওয়া ও অন্যান্য ঝুঁকির আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিষয় সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কখন বিদ্যালয় পুনরায় চালু করা যাবে; সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর সে অনুযায়ী জাতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে এই নির্দেশিকাটি প্রণীত হয়েছে।’

নির্দেশিকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেসকো, বিশ্বব্যাংক, সিডিসি (ইউএসএ)-এর গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করতে এবং প্রতিটি শিশুর শিখন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করতে এই নির্দেশিকা ক্রমাগত অভিযোজন ও প্রাসঙ্গিকীকরণ করা প্রয়োজন হবে বলেও নির্দেশিকায় বলা হয়েছে।

গাইডলাইন

১. বিদ্যালয় আবার চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার নানাবিধ মাত্রা সম্পর্কে সুস্পষ্ট সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হবে।

২. বিদ্যালয় কার্যক্রম পুনরায় চালু করার আগে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. বিদ্যালয় পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত সুস্পষ্ট, সহজবোধ্য ও শিশুবান্ধব ভাষায় প্রটোকল প্রণয়ন করতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশিবিষয়ক শিষ্টাচার, সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবহার, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং নিরাপদ খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করার অভ্যাস গড়ে তোলা বিষয়ক তথ্য ও নির্দেশনা থাকবে।

৪. নিরাপদ বিদ্যালয় পরিচালনার লক্ষ্যে বিদ্যালয় খোলার আগে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সে লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে শ্রেণি পাঠদান শুরু হওয়ার অন্তত ১৫ দিন আগে বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

৫. সুস্থতা ও সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে স্বাস্থ্য সূচকগুলো সক্রিয়ভাবে মনিটর করতে হবে। শিখন-শেখানো পদ্ধতিকে আরো গতিশীল করবে হবে, দূরশিক্ষণসহ মিশ্র শিখন-শেখানো পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। রোগ প্রতিরোধে সংক্রমণ এবং প্রতিরোধ সম্পর্কিত তথ্য পাঠে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৬. শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যোগাযোগ ও সমন্বয় প্রক্রিয়া এবং কৌশলগুলোকে আরো জোরদার করতে হবে, যাতে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্থানীয় জনগণ, অভিভাবক ও শিশুদের সম্পৃক্ততা এবং মতবিনিময় বাড়ানো যায়।

প্রয়োজনীয় কার্যক্রম

১. প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারিকৃত নির্দেশনা ও গাইডলাইন অনুসরণ করা হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও প্রাথমিক অধিদফতর থেকে পাঠানো সব নির্দেশনা ও পরামর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।

২. প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বাজেট প্রণয়ন ও অর্থায়নের পরিকল্পনা করতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আগাম অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।

৩. বিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা ও জীবাণুমুক্তকরণ, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশি বিষয়ক শিষ্টাচার, সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবহার, অসুস্থদের জন্য করণীয় এবং নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুতকরণের অভ্যাস গড়ে তোলার বিষয়ে শিক্ষক/শিক্ষার্থী/কর্মচারী ও অভিভাবকদের জন্য তথ্য ও নির্দেশনাসংবলিত পোস্টার, লিফলেট প্রস্তুত, বিতরণ করতে হবে।

৪. শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক হাত ধোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং বহিরাগতদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিদ্যালয় খোলার আগেই প্রয়োজনীয়সংখ্যক নন-কন্টাক্ট থার্মোমিটার সংগ্রহ করতে হবে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...