সব
প্রবাস ডেস্ক,
গত ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২০ রোজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটস্থ ডাইভারসিটি প্লাজায় বাংলাদেশে মেধাবী ছাত্র ইংল্যান্ডে লেখাপড়া করে আইটি পেশায় নিয়োজিত ও ইমিগ্রেন্ট ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার অপেক্ষামান তালিকায় থাকা সাব্বির আহম্মেদকে পরিকল্পিতভাবে গত ৩১শে আগষ্ট ঢাকার মীরপুর-১ এ আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা এবং ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২০ ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুবরণ করায় এই নির্মম হত্যার বিচারের দাবিতে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে নিউইয়র্কে বাংলাদেশীসহ বিপুল সংখ্যক আমেরিকান উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তরা সাব্বির হত্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারের দাবী জানান এবং ভবিষ্যতে যাতে কোন বাংলাদেশী নাগরিকদের এভাবে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে না হয় সেজন্য দেশে এবং বিদেশে সকল নাগরিককে হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে বিচারের দাবীতে সবাইকে যার যার স্থান থেকে প্রতিবাদ করার আহবান জানানো হয়। সমাবেশে নিহত সাব্বির আহম্মেদ এর চাচা মোঃ মনজুর লস্কর এবং মোঃ এনাম লস্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর এই হত্যার কান্ডের বিচারের জন্য খোলা চিঠি জনসাধারণের নিকট বিতরণ করেন এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর পৌছে দেওয়ার জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি নিম্নরূপ:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি
আমি মোহাম্মদ মন্জু লস্কর , পিতা মৃত আবদুর রশিদ লস্কর, ৩৭-১৪, ৯০ষ্ট্রীট, জ্যাকসন হাইটস, নিউইয়র্ক-১১৩৭২, ফোন-০০১-৯১৭৪৩২৭৩২০, এইমর্মে আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ইংল্যান্ডে লেখাপড়া করা এবং ইমিগ্রান্ট ভিষা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার অপেক্ষমান তালিকায় থাকা আমার ভ্রাতুস্পুত্র সাব্বির আহমেদ গত ৩১/০৮/২০ইং তারিখ সকালে বাংলাদেশে তার পল্লবীর বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়। রাত আনুমানিক ৮-১৫ ঘটিকার সময় আমার বড়ভাইয়ের বড় ছেলে সাকিব আহমেদের ০১৬২৮৬১৫২৭৭নং ফোনে তাদের পুর্ব পরিচিত মো: মামুন নামের এক ব্যক্তি তার ০১৯৯০৪০৯৩১৬ নং মোবাইল থেকে ফোন করে জানায় যে, আমার বড় ভাইয়ের ছোট ছেলে সাব্বির আহমেদ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে এবং তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উক্ত সংবাদ প্রাপ্তির পর তাৎক্ষনিকভাবে আমার বড় ভাইয়ের বড় ছেলে সাকিব মিরপুর থেকে এবং ভাইয়ের শ্যালক ও শ্যালিকা আজিমপুর থেকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে গিয়ে আমার ভাইয়ের শ্যালক এবং শ্যালিকা দেখতে পায় সাব্বিরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে এবং ১০/১৫ জন যুবক তাকে ঘিরে জবানবন্দি গ্রহনে ব্যস্ত আছে। ডাক্তারদের পিড়াপিড়িতে তারা সরে গেলে ডাক্তারগন তার চিকিৎসা শুরু করেন। এ পর্যায়ে আমার বড় ভাইয়ের বড় ছেলে সাকিব আহমেদ এবং ভাইয়ের শ্যালক ও শ্যালিকা উপস্থিত যারা ভর্তি করতে এনেছে তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে তারা জানান যে, ঢাকার শাহআলী থানা এলাকাধীন মিরপুর ১নং সেকশনের ডি ব্লকস্থিত এভিনিউ ১/এ এর ১০/২ নং বাড়ীর ৩য় তলার বাম পার্শে জনাব মো: তারেকের বাসায় অগ্নিদগ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে। তারেকের বোন জামাই মো: মামুন, তারেকের বোন সোনিয়া এবং সোনিয়ার মায়ের উপস্থিতিতে শরীরে কেরোসিন ঢেলে অগ্নিদগ্ধ করা হয়।
পরবর্তীতে আমার অপর দুই ভাই ,বড় ভাইয়ের শ্যালক এবং শ্যালিকা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারে যে, আলোচ্য বাসায় জনাব তারেক, তারেকের বোনজামাই মামুন, তারেকের বোন সোনিয়া এবং তারেকের মায়ের উপস্থিতিতে তাদের প্ররোচনা, উসকানি এবং সহযোগীতায় অগ্নিদগ্ধের উক্ত ঘটনাটি ঘটেছে । অত্যন্ত দু:খের সাথে আপনাকে জানাচ্ছি যে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার বড় ভাইয়ের ছেলে সাব্বির আহমেদ গত ০৫/০৯/২০ তারিখ বিকেল ৪-৩০ ঘটিকায় হাসপাতালেই শেষ নি:স্বাস ত্যাগ করেন(ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। ৪/৫ জন লোকের সন্মুখে কিভাবে ,কোন প্ররোচনা এবং সহযোগীতায় উক্ত অগ্নিদগ্ধের ঘটনা ঘটেছে , কে বা কোন কোন ব্যাক্তি কেরোসিন এনে কিংবা তা প্রজ্জলিত করে পুরে মারায় সহযোগীতা করেছে, কিংবা কোন পরিস্থিতিতে আমার বড় ভাইয়ের ছেলে উক্ত বাসায় উপস্থিত হয়েছিল কিংবা ডেকে নিয়ে তাকে আগুনে ঝলসে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে কিনা এ বিষয়গুলো তদন্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরী বলে আমি মনে করি।
এখানে উল্লেখ্য যে, আলোচ্য বাসার জনাব তারেকের বোন সোনিয়ার সাথে আমার ভাতিজা সাব্বির আহমেদের বিবাহের বিষয়টি গত ১৪/১২/২০১৯ তারিখে উভয়পক্ষের অবিভাবকগনের উপস্থিতিতে পারিবারীকভাবে চুড়ান্ত করা হয়েছিল, কিন্তু করোনা এবং আমার বড় ভাইয়ের অসুস্থতার কারণে বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা বিলম্বিত হচ্ছিল। কিন্তু আমার ভাতিজা এবং উক্ত মেয়ে সোনিয়ার নিয়মিত একে অপরের বাসায় যাতায়াত ছিল। সোনিয়া সবশেষ গত ২৯/০৭/২০ তারিখেও সাব্বিরের সাথে বর্ধিত পল্লবীর বাসায় এসেছিল। তৎসত্বেও কি এমন ঘটনা ঘটেছিল যে অভিভাবক হিসাবে আমার ভাইকে কোন কিছু অবহিত না করেই সোনিয়ার পরিবার বিশেষকরে তার মা সোনিয়াকে অন্যত্র বিবাহ দেয়ার উদ্দোগ গ্রহণ করেছিল এবং জানা যায় যে, আগামী ১০ই সেপ্টেম্বর-২০ তারিখে অন্য এক ছেলের সাথে সোনিয়ার বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছিল।
সম্ভবত: এসকল কারণেই আলোচ্য ৩১/৮/২০ তারিখে আমার ভাইয়ের ছেলে সাব্বির আহমেদকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে, কিংবা আমার ভাতিজা সাব্বির আহমেদ বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে না পারায় তাদের বাসায় গিয়ে তার প্রতিবাদ করায় তাদের কর্তৃক আক্রমনের স্বীকার হতে পারে। পারিবারীকভাবে বিবাহের বিষয়টি যেহেতু উভয়পক্ষই নিশ্চিৎ করেছিল সেহেতু ছেলের পরিবার তথা আমার ভাইকে কোন কিছু অবহিত না করে সোনিয়াকে অন্যত্র বিবাহ দেয়ার উদ্দোগ নেয়া না হলে হয়ত এ অনাকাংখিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নিকটজন হারানোর যে কষ্ট তা আপনার চেয়ে আর ভাল কেহ উপলব্দি করতে পারবেনা, সেহেতু সোনিয়ার পরিবারের ভুল সিদ্ধান্ত এবং তাদের প্ররোচনা, সহযোগীতা এবং তাদের অবহেলার কারণে আজ অকালে একটি তরতাজা প্রান ঝড়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ তদন্ত পূর্বক প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও কষ্টের বিষয়টা কিছুটা লাঘব করাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদানের জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা গেল।
(মো: মন্জু লস্কর)
মৃত সাব্বির আহমেদের চাচা
৩৭-১৪, ৯০ ষ্ট্রীট,
জ্যাকসন হাইটস,
নিউইয়র্ক-১১৩৭২,যুক্তরাষ্ট্র ।
Developed by: Helpline : +88 01712 88 65 03