বৃটেনে করোনা সংক্রমণ রোধে ৬ জনের বেশী জড়ো হওয়া নিষিদ্ধ

বৃটেনে সর্বত্র বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিন হাজার খানেক করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সংক্রমণ বাড়ছে স্কটল্যাণ্ড ও ওয়েলসেও। বিশেষ করে ইংল্যাণ্ড চরম আকার ধারণ করেছে। আর তাই বাধ্য হয়েছে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ইংল্যাণ্ড নতুন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এতে করে ৬ জনের বেশী জড়ো হতে পারবেন না। স্কটল্যাণ্ডও একই পন্থা অনুসরণ করতে পারে বলে জানা গেছে। দেশব্যাপী লকডাউনের ব্যাপারে সরকারের অনীহা বার বার প্রকাশ পেলেও শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা করা সম্ভব নাও হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বার বার ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন।

নতুন বিধিনিষেধ আরোপের পরও করেনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানো রোধে ব্যর্থ ইংল্যাণ্ড রাত ১০টার পর কারফিউ জারি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে ডেইলি মেইলের সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বুধবার বিষয়টি পার্লামেন্ট উত্থাপনের পর ডাউনিং স্ট্রিটে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এসময় তাঁর সাথে থাকা প্রধান মেডিক্যাল অফিসার প্রফেসর ক্রিস উইটি দ্রুত সংক্রমণ বাড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ১৪ সেপ্টেম্বর, সোমবার থেকে ৬ জনের বেশী লোক একত্রিত হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ফলে ঘরে কিংবা বাইরে ৬ জনের বেশী মানুষের একত্রিত হওয়া বা সমাবেশ করা যাবে না।
তবে প্রধানমন্ত্রীর অফিস নাম্বার ১০ জানিয়েছে এই নিয়ম স্কুল, কর্মক্ষেত্র, কোভিড সুরক্ষিত বিবাহ, ফিউনারেল এবং খেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
নতুন এই নিয়ম ভঙ্গ করলে এবং পুলিশকে যথাযথ কারন দেখাতে ব্যর্থ হলে ১০০ পাউণ্ড জরিমানা গুণতে হবে। বারবার নিয়ম ভঙ্গ করলে ৩২০০ পাউণ্ড পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এছাড়াও বলেন, আইন অনুযায়ী পাব এবং রেঁস্তুরাগুলিকে ট্রেসিংয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর তা না করলে তাদের জরিমানা করা হবে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলি কোভিড-সুরক্ষিত মার্শাল প্রবর্তন করবে। এক্ষেত্রে তারা পরিবেশ সুরক্ষা কর্মকর্তাদের সাহায্যও পাবে।
বর্ডার ফোর্স সীমান্তে বল প্রয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অক্টোবর থেকে স্টেডিয়ামগুলিতে বৃহত্তর উপস্থিতি ও সম্মেলনের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত থাকবে।

স্কুল-কলেজ উন্মুক্ত রাখা বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি বলেন যে, এগুলি কেবলমাত্র শেষ উপায় হিসাবে বন্ধ করা উচিৎ। সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া স্বাস্থ্যের ঝুঁকির চেয়ে আরও বেশী হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বরিস জনসন জোর দিয়ে বলেছেন যে, আমাদের অর্থনীতি চালু এবং বিদ্যালয়সমূহ উন্মুক্ত রাখতে নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে এবং গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় তা করা ছাড়া তার আর কোনও উপায় নেই। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ব্রিটিশ নাগরিককে প্রতিদিনই করোনা পরীক্ষা উচিৎ।

এদিকে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়বার দেশব্যাপী লকডাউনের বিষয়টিও উড়িয়ে দেননি হেলথ সেক্রেটারি ম্যাট হ্যানকক। এলবিসি রেডির সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বছরের শুরুর দিকে লকডাউনের স্বাদ পাওয়া ব্রিটিশদের আবার তাতে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি তিনি একেবারে উড়িয়ে দেবেন না। আশা করেছিলাম যে আরেকটি লকডাউন এড়ানো সম্ভব হবে — যোগ করে তিনি বলেন, লোকেরা নিয়ম মেনে চললে কঠোর কিছু না করাই হলো আমাদের লক্ষ্য।

অপরদিকে, পোল জরীপেও ৫৫ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয়বার দেশ্যব্যাপী লকডাউনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। আর লকডাউনের বিরোধীতা করেছেন ৪১ শতাংশ লোক। ডেইলি এক্সপ্রেস কর্তৃক পরিচালিত এক পোল জরীপে এই তথ্য ওঠে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া এখনই থামাতে হবে। তাই সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হবে। পুলিশ তা কার্যকর করবে।

এদিকে, গ্রেটার ম্যানচেস্টারের বোল্টনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয়ভাবে কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বোল্টনের পাব, রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফেগুলোতে কেবল টেইকওয়ে ব্যবসা করা যাবে। রাত ১০টার মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। সরকার বলছে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সের তরুণদের মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সর্বশেষ এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

[১] [২] [৩]