আমার দুই নায়কের বিদায়

ফেরদৌস হাসান,

  • প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:১৫ অপরাহ্ণ

আমার দুই নায়কের বিদায়। একজনের জন্য বুকের ক্ষতটা না শুকতেই আর একজন আঘাত করলেন। সাদেক বাচ্চু। অামার ঝুমকা নাটকের নায়ক। তখন আসাদ,আফজালদের যুগ। বাচ্চু ভাইদের কদর কম। কে এস ফিরোজ ব্যারাকের লোক। মানে সে লেফট রাইট জানতে পারে কিন্তু অভিনয় জানবে এটা কীভাবে হয়! তবে জিয়া আনসারি নতুনদেরই সুযোগ দেন। যেমন আমাকে দিয়েছিলেন নাট্যকার হিসেবে। আমার তখন দুটো নাটক ঝিনুক নীরবে সহো আর কালপুরুষ প্রচার হয়েছে। জিয়া ভাই তাঁর বাসায় ডেকে কে এস ফিরোজ আর সাদেক বাচ্চুকে দেখিয়ে বললেন এদের নিয়ে এমন কিছু লিখতো রানা যেন হৈচৈ পড়ে যায়। ওখানে শান্তা ইসলামও হাজির ছিল। তিনি শান্তাকে দেখিয়ে বললেন তবে নায়িকা কিন্তু আমার এই মেয়েটি…

আমি বাচ্চু আর শান্তাকে নিয়ে লিখলাম ঝুমকা। আর কে এস ফিরোজকে নিয়ে রাজ্যেফেরা। জিয়া ভাইয়ের স্বপ্ন সত্যি হলো৷ সেই সময়কার সাত রাজার ধন মানিক ছিল সাপ্তাহিক বিচিত্রা৷ সেখানে লেখা হলো দর্শক ঝুমকার মত নাটক দেখতে চায়। বছর শেষে তাদের জরিপে সেরা দশের শীর্ষে ছিল অামার ঝুমকা। আর সেরা নন্দিত জুটি সাদেক বাচ্চু ও শান্তা। কিন্তু কে এস ফিরোজ রাজ্যফেরাতে দাগ কাটতে না পারলেও আমার “জীবন ঘসে আগুন”এ বাজি মাত করলেন। তিনি নাম ভূমিকায় ছিলেন। আতিকুল হক চৌধুরী নাটকটি দেখে বিচিত্রায় দুপাতা ভরে প্রশংসা করেছিলেন। তিনি মনে হয় জীবনে এই প্রথম কোনো একটি নাটকের প্রশংসা করলেন!

জিয়া ভাই তাঁর সাদেক বাচ্চু, শান্তা আর কে এস ফিরোজের উত্থানে বেজায় খুশি। আমাকে আক্কাসের চাইনিজ থেকে শুরু করে বিলাতী অনেক কিছু খাইয়ে দিলেন আত্নহারা হয়ে। আবার সেই জিয়া ভাই-ই আমাকে সাদেক বাচ্চুর কারণে বাদ দিয়েছিলেন। মানে আমার একটি সিরিজ নাটকে সাদেক বাচ্চু ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর নায়িকা ছিলেন তাঁর ছাত্রী। সেই ছাত্রীটি বড় স্টার হওয়ার কারণে সে হেঁটে গিয়ে সাদেক বাচ্চুর সাথে কথা বলবে না। সাদেক বাচ্চুকেই হেঁটে ছাত্রীর কাছে যেতে হবে।
আমি সেই নায়িকাকে তার শিক্ষকের কাছে গিয়ে কথা বলতে বললাম কিন্তু সে কিছুতেই যাবে না।

আমি তখন জিয়া ভাইকে বললাম হয় নায়িকাকে বাদ দেন নাহয় আমাকে। তিনি আমাকেই বিদায় করলেন। তবে আমি মনে করেছিলাম শিল্পীরা সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু আমার মত ব্ল্যাক লিস্টেড হওয়ার ভয়ে কেউই সেটা করেননি। শুধু সাদেক বাচ্চু। আমি তিন নম্বর স্টুডিও থেকে বেরিয়ে আসার সময় নীরবে চোখ মুছলেন। আর কে এস ফিরোজ আমাকে বুকে চেপে ধরে রাখলেন কিছুক্ষণ।
ফিরোজ স্যার আপনার বুকের সেই ওমটুকুই ছিল আমার সান্ত্বনা…আর বাচ্চু ভাই আপনার সেই চোখের জলটুকু ছিল মানুষের চোখের জল!

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...