সব
তুহিন খান নিহাল,
প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। দেশের শোবিজ অঙ্গনের জনপ্রিয় মুখ। মুঠোফোনের বিজ্ঞাপন দিয়ে শিশুশিল্পী হিসেবে পথচলা শুরু তার। এরপর অভিনয় করেছেন অসংখ্য দর্শকপ্রিয় সিনেমায়। সময়ের পরিক্রমায় দীর্ঘ আট বছর পর ছোট্ট দীঘি এবার নায়িকা হয়ে আসছেন। চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন একের পর এক সিনেমায়। চলচ্চিত্রের নানা বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন তুহিন খান নিহাল।
দীর্ঘ ৮ বছর বিরতির পর আবার লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের ঝলমলে দুনিয়ায় দীঘি? কেমন লেগেছিল?
আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম। একটু পরপর কান্না আসছিল। বারবার মনে হচ্ছিল এ দিনটিতে যদি একটিবারের জন্য মাকে নিয়ে আসতে পারতাম। এ দিনটির জন্যই তো মা অপেক্ষা করেছিলেন। মায়ের ইচ্ছা ছিল পারফেক্ট বয়স হলে তবেই আমি নায়িকা হব। সেজন্যই আমার ৮ বছরের গ্যাপ ছিল। যার লক্ষ্যেই আমি ২০১২ সালে অভিনয় ছাড়ি। দীর্ঘ এ সময়টায় আমি কোনো সিনেমা, বিজ্ঞাপন, মডেলিং কিংবা গণমাধ্যমেও কথা বলিনি। যখন নায়িকা হিসেবে কাজ শুরু করেছি, আমার পাশে মা নেই; বিষয়টি ভাবলেই আমার কান্না আসে। শুটিংয়ের প্রথম দিন আমার কলটাইম ছিল সকাল ৮টায়। মানে আমাকে ৭টায় রেডি হয়ে শুটিংয়ে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কথা থাকলেও আমি একদম ঘুমাতে পারিনি। বারবার চোখের সামনে আমার মায়ের কথাগুলো, তার স্মৃতিগুলো ভেসে বেড়াচ্ছিল।
শিশুশিল্পী থেকে নায়িকা! প্রস্তুতির জায়গাটা সম্পর্কে জানতে চাই?
‘বঙ্গবন্ধু’র বায়োপিক দিয়ে আমার নায়িকা হয়ে ফেরার কথা ছিল। বলা চলে সেটি আমার ড্রিম প্রজেক্ট। কারণ আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী রেনুর চরিত্রে অভিনয় করব। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। তবে করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। রেনু চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য স্ক্রিপ্টটা পাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত সেটি পড়েছি। আয়নার সামনে প্র্যাকটিস করেছি। ওনার ওপর নির্মিত বিভিন্ন ডকুমেন্টারি, বই পড়ে রেনু চরিত্রের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম। কিন্তু সেটা করোনার কারণে আটকে গেল। তবে আমি ওনার চরিত্রে অভিনয় করার মতো আরো একটি সিনেমা পেয়েছি ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই’। এতেও আমি রেনু চরিত্রে অভিনয় করেছি।
‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই’ সিনেমাটি সম্পর্কে কিছু বলুন?
এ সিনেমায়ও আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব চরিত্রে অভিনয় করেছি। এতে আমার বিপরীতে আছেন শান্ত খান। টিমের সবার আন্তরিকতায়
গত মাসের ২৪ তারিখ এটির শুটিং শেষ হয়েছে। নির্মাতা শামীম আহমেদ রনি দুর্দান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে কাজে ফেরার অভিজ্ঞতাটা দারুণ ছিল। গতকাল ডাবিংও শেষ করেছি। এখন খুব ভয় হচ্ছে এই ভেবে যে, নায়িকা হিসেবে দর্শকের মন কতটুকু জয় করতে পারি।তবে এটুকু বলতে পারি, আমি সেরাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তার পরও মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় করছে।
অনেক বছর পর শুটিংয়ে ফিরে কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করছেন?
পার্থক্য তেমন একটা মনে হয়নি। তবে ইন্ডাস্ট্রি অনেক ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। মানে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে আমার চলচ্চিত্র পাড়ায়। তাছাড়া পরিবেশটা আগের মতোই আছে। তবে ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার সঙ্গে শুটিং এত উপভোগ করেছি যে, মাঝে প্রায় মনে হতো এখানেই ফিরে আসি।
বর্তমানে ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। আবার নায়িকা হয়ে চলচ্চিত্রে ফেরা। সব মিলিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নেবেন কীভাবে?
আপাতত করোনার কারণে পড়াশোনার চাপটা একটু কম। তবে কলেজ খোলা হলে বিষয়টি ভাগ করে নিতে হবে। কারণ কলেজেও উপস্থিত থাকতে হবে। কলেজ খুললে নিজেকে দুয়ের মধ্যে ম্যানেজ করে নিতে হবে। যেহেতু সায়েন্স নিয়ে পড়ছি পড়াশোনারও একটু চাপ আছে।
এখনো করোনার প্রাদুর্ভাব কমেনি। ভয় কাজ করছে না?
আমি এ বিষয়ে খুব সচেতন। সেইফটি মেইন্টেন করেই কাজ করছি। বাবাও আমার মতোই। সব সময় সচেতন থাকার চেষ্টা করেন। আমার মতে, সচেতনতাই আমাদের একমাত্র অবলম্বন।
বর্তমানে আর কোন সিনেমায় কাজ করছেন?
এখন পর্যন্ত আমি নায়িকা হিসেবে সাতটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এরমধ্যে পাঁচটি সিনেমাই শাপলা মিডিয়ার। নতুন করে ‘তুমি আছো তুমি নেই’ শিরোনামের এক সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এতে আমার বিপরীতে থাকবেন সায়মন সাদিক। নির্মাণ ুকরবেন দেলোয়ার জাহার ঝন্টু। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে সিনেমাটির শুটিং শুরুর কথা রয়েছে। আর এ মাসেই নতুন আরো একটি সিনেমার ঘোষণা আসবে। শিগগিরই জানাব।
সিনেমা হল খুলেছে, ছবি দেখা হয়?
স্বাভাবিক সময়ে হলে গিয়ে প্রতি মাসে অন্তত দুটি সিনেমা দেখা হতো আমার। করোনার কারণে বেশ কয়েক মাস হলো যাওয়া হয়নি। খুব মিস করছিলাম। যদিও অনলাইন প্ল্যাটফরমে অনেক দেশি-বিদেশি সিনেমা দেখেছি। গতকাল থেকে সিনেপ্লেক্স খুলেছে। অবশ্যই আমাদের সিনেমাগুলো আবার উপভোগ করব।
ভবিষ্যৎ নিয়ে দীঘির পরিকল্পনা কী?
আমি হিরোইন হতে চাই না অভিনেত্রী হতে চাই। নিজের ট্যালেন্ট ও অভিনয় দিয়ে মানুষকে খুশি করতে চাই। আমার প্রয়াত মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে চাই। অভিনয়ের মধ্য দিয়েই দর্শকদের হলে আনতে চাই। নাচ-গান তো বাকি পাঁচটা মেয়েও পারে। মোটকথা আমি নিজেকে সফল অভিনেত্রী হিসেবে দেখতে চাই।
Developed by:
Helpline : +88 01712 88 65 03