বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার তীব্র নিন্দা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২০, ১০:২৯ অপরাহ্ণ

সম্প্রতি ধর্ম অবমাননার ধুয়া তুলে মাইকে প্রচার চালিয়ে লোকজনকে জড়ো করে কুমিল্লার মুরাদনগরের কোরবানপুর গ্রামে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদীরা। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ তাদের এক সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক লোমহর্ষক কর্মকান্ডের বিস্তারিত পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন।

এতে জানা যায় যে, ধর্ম অবমাননার অজুহাতে বাংলাদেশের ভিন্নধর্মাবলম্বী মানুষকে প্রতিনিয়ত সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে নিপীড়ন, নির্যাতন ও মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশন ইউকের পক্ষ থেকে এই অন্যায় অমানবিক ঘৃণ্য কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সাথে জানা যায় যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিঠুন মন্ডল, ফেনীর মিঠুন দে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিথি সরকার, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দীপ্ত পাল, প্রতীক মজুমদার, পার্বতীপুর সরকারী কলেজের ছাত্রী দীপ্তি রানী দাস এর বহিস্কার ও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্র জানায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সংখ্যালঘুদের উপর গুজব ও হামলার অভিযোগ সম্পর্কে বলেছেন “এগুলো ওনারা অন্যায়ভাবে বলছেন।” – এ বক্তব্য খুবই হতাশাব্যন্জক। শান্তিপ্রিয় নাগরিকের উপর অন্যায় অত্যাচারের সুবিচার, জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি এই অসহমর্মী কটাক্ষপাত অবাঞ্চিত ও দু:খজনক।

আইনের শাসন কার্যকরীকরণ ও দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রতিশ্রুতিহীন এধরণের বক্তব্য অপরাধীদের প্রশ্রয়দানের নামান্তর বলে মনে হয়। আমরা বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশন ইউকে, প্রবাসে বাংলাদেশী পরিচয়েই বাঁচি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নিজেদের শেকড়ের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করতে চাই। কিন্তু শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নৃশংস নির্যাতন নিপীড়নের অন্তহীন সংবাদ বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম তথা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একদিকে সরকার ও প্রগতিবাদী সুধীজনেরা অসাম্প্রদায়িকতার দোহাই দিচ্ছেন, অন্যদিকে দিনে দিনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন বাড়ছেই ও জনসংখ্যা শূণ্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে বিশ্বসমাজে বাংলাদেশে গনতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা ও সুরক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
প্রতিটি নির্বাচন থেকে শুরু করে, ধর্ম অবমাননার সাজানো অভিযোগে পরিকল্পিত ভাবে বারবার সংখ্যালঘুদের উপরই নেমে আসে নির্যাতন নিপীড়নের খড়্গ। আজ পর্যন্ত কোন ঘটনার বিচার ও দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে দেখা যায়নি। শুধু মাত্র গুজব ছড়িয়ে কোন সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী যেন সংখ্যালঘুদের নির্যাতন, নিপীড়ন ও জানমালের ক্ষতি করতে না পারে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্য ও ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে ভুলন্ঠিত করে, বারবার সংখ্যালঘু শান্তিপ্রিয় নাগরিকের রক্তে রক্তাক্ত হচ্ছে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ।

পরিশেষে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি ও ভূক্তভোগীদের ক্ষতিপুরন দাবী করছি। সর্বক্ষেত্রে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতনকারী সকল আসামীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারের ব্যবস্হা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশন ইউকে আশা করে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও প্রশাসন প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক জীবন যাপন সুনিশ্চিত করবেন। বিজ্ঞপ্তি

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...