দেশসেরা ফ্রিল্যান্সার ফাহিম মারা গেছেন

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে বাড়িতে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে স্বাবলম্বী হয়ে সাড়া জাগানো মাগুরার বিস্ময়কর যুবক ফাহিম-উল করিম আর নেই।

বুধবার (১১ নভেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

২২ বছর বয়সী ফাহিম ডুচেনে মাসকিউলার ডিসট্রফি (ডিএমডি) রোগে ভুগছিলেন। বিরল এ রোগের কারণে তার গোটা শরীর অচল হয়ে যায়। সচল ছিল শুধু মাথা ও ডান হাতের দুটি আঙুল। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনেন তিনি। নিজের আয় দিয়ে মাগুরা শহরের মোল্লাপাড়ায় জমি কিনে বাড়ি তৈরি করে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করেন তিনি।

ফাহিমের বাবা রেজাউল করিম একটি বেসরকারি কোম্পানির বিপণন কর্মী। তিনি জানান, মাগুরা শহরে ভাড়া বাসায় সন্তান, স্ত্রী, ফাহিমসহ দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি বসবাস করে আসছিলেন। টানাটানির সংসার হলেও ভালোই কাটছিল তাদের দিন। একমাত্র ছেলে ফাহিম ২০১২ সালে জেএসসি পরীক্ষার আগে হঠাৎ শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে।

দৃঢ় মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মেধা কাজে লাগিয়ে ফাহিম সফল ফ্রিল্যান্সার হন। ২০১৬ সালে অন্যের সহযোগিতা, প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তিনি একটি ল্যাপটপ কেনেন। এরপর ইন্টারনেটে গুগল ও ইউটিউব ঘেঁটে বিভিন্ন কাজ শিখে নেন। ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন মার্কেটে ফাইবারে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ খুঁজতে থাকেন। ক’দিনের মধ্যে পাঁচ ডলারের একটি কাজ পেয়ে যান। অল্প সময়ের মধ্যে সফলভাবে কাজটি করার জন্য বায়ার তাকে আরও ১০ ডলার বোনাস দেন। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফাহিমকে। প্রথমে ব্যানার ও বিজনেস কার্ড দিয়ে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে সব ধরনের কাজই করেন।

কাজের দক্ষতার কারণে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সার ফাহিম বিশ্বের ৩০ থেকে ৩৫টি দেশের কাজ করতেন। অর্ডার এত বেশি যে, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সময় দিলেও কাজ শেষ হয় না। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে গত চার বছর ধরে ফাহিম মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে আয় করেছেন। তার উপার্জনে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরে। বোনের লেখাপড়া চলছিল।

আগে ভাড়া বাসায় থাকলেও এখন শহরের মোল্লাপাড়ায় জমি কিনে বাড়ি করেন। সেই বাড়িতে ফাহিম পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করতেন।

ফাহিমের বাবা রেজাউল করিম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তার সব শেষ হয়ে গেছে। দেশের বাইরে নিয়ে ফাহিমকে উন্নত চিকিৎসার করাতে পারলে পুরোপুরি সুস্থ না হলেও শারীরিক অবস্থা কিছুটা হলেও ভালে হতো। অর্থের অভাবে তিনি পারেননি।

[১] [২] [৩]