কমলায় হাসছে সিলেট

হাসান শামীম,

  • প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২০, ৪:০৭ পূর্বাহ্ণ

‘কমলা ফুলি, কমলা ফুলি, কমলা লেবুর ফুল। এক সময় বাংলা সহপাঠে ছিল সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘কমলা ফুলি’ ছড়াটি। এখন ছড়াটি পাঠ্যসূচিতে নেই। বইয়ে না থাকলেও সিলেটিদের মনে তা আছে। কারণ ছড়ার কমলা ফুলির সেই ঘর এখন সিলেটে। আর মৌসুমের এই সময়টায় সিলেটে কমলার ফলনও হয় ব্যাপক।
শীত জেঁকে বসার আগের সময়টুকু হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের কমলার ফলন দেখা যায়। শীত পুরো দমে শুরুর আগেই কমলা পাকতে শুরু করে। গাছ থেকে ঝরে পড়ে পাকা কমলা। যদিও কমলার মৌসুম বলতে গেলে পুরো শীতকাল। তবে আগাম ফলন হলে শীতের মাসখানেক আগে থেকেও পাওয়া যায় কমলা।
এই সময়টায় কমলা চাষিদের বাগানে ‘কমলার নাচন’ দেখা যায়। সারি সারি গাছ নুয়ে পড়েছে ফলের ভারে। সবুজ পাতার ফাঁক গলে উঁকি দেয় থোকা থোকা কমলা। সবুজ রঙের কমলার একটু লালচে হলুদভাব আসা মানেই ফল পাকতে শুরু করে।
কমলার গাছ লেবু গাছের মতোই দেখতে। কাঁচা কমলা ভর্তি গাছ প্রথম দেখাতে লেবু গাছ বলেই ভুল হবে।

সিলেটে কমলা উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বছর দশেক আগে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ‘বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন’ নামে আট বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে আট হাজারের বেশি কমলার নতুন বাগান করার পরিকল্পনা হয়। ২০০১ সালের জুলাই থেকে ২০০৬ সালের জুন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ চলে। চার জেলায় ২৫০টি বাগান তৈরির স্থান নির্ধারণ করা হয়। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পাঁচ হাজার কমলা চাষিকে।
মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুফল হচ্ছে এখনকার কমলা চাষ। সব মিলিয়ে সিলেট অঞ্চলে ২৮২ হেক্টর জমিতে হয় কমলা চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে সিলেটে কমলার গড় উৎপাদন এক হাজার ৪৭০ মেট্টিক টন।

সব কমলা তো দেখতে গোলগাল এবং রসে টইটুম্বুর। তবে এরমধ্যে স্বাদ আর জাত ভেদে রকমফেরও আছে। উৎপাদন এলাকার সঙ্গে কমলার নানা নামকরণও নজর কাড়ে। সুস্বাদু আর সুঘ্রাণের জন্য সিলেটের বিয়ানীবাজারের জলঢুপী এলাকার কমলার পরিচিতি ব্যাপক।

জলঢুপী কমলা ছাড়াও ওই এলাকায় উৎপাদিত আনারসেরও আলাদা কদর রয়েছে। এছাড়া বড়লেখা ও জুড়ির কমলাও বেশ ভালো। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি ও বালাটের পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত কমলার চাষ হয় এ অঞ্চলের টিলা এলাকায়।

জলঢুপী কমলা বিক্রি করছেন ফারুক মিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রতি হালি কমলা বিক্রি করছি ৬০-৮০ টাকায়। ছোট বড় বিভিন্ন প্রকারের কমলা রয়েছে।’ গুণগত মানের কারণে জলঢুপী কমলার চাহিদা সিলেটসহ সারাদেশে রয়েছে।

সারা দেশের মতো এখন ‘কমলার ঘর’ সিলেটও ফলটি আমদানি করা হয়। তারপরও কমলার মৌসুম শুরু হয় ঘরের ফলন দিয়ে। আমদানি করা কমলার ভিড়েও ‘সিলেটি’ অথবা ‘ঘরের’ কমলার আলাদা কদর রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটের মাটি ও প্রকৃতি কমলা চাষের জন্য উপযোগী। তবে গাছ রোপন করলেই আপনাআপনি কমলা হয়, এমনটাও কিন্তু নয়। বছরজুড়ে কমলাচাষিদের চলে নানা খাটাখুটুনি।

ছবি : দিলখোশ জুড়ির জয়নুল মিয়ার বাগান।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...