জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

সিলেট অফিস,

  • প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২০, ৫:৫২ অপরাহ্ণ

জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার চালাচ্ছেন সংস্থার সাবেক ট্রাস্টি নুরুল করিম। সংস্থা থেকে বহিস্কৃত এই নুরুল করিম সম্পর্কে সকলকে অবগত করতে এবং নানা অপপ্রচারের প্রতিবাদে গতকাল সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এম.এম. নূর, ভাইস চেয়ারম্যান ড. সানাওয়ার চৌধুরী ও সেক্রেটারী হাসনাত আহমদ চুনু।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে, ড. সানাওয়ার চৌধুরী বলেন, শিকড়ের টানে গঠিত জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্ট জগন্নাথপুর উপজেলার শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে কাজ করে আসছে। উপজেলার শিক্ষার প্রসারে সংগঠনটি বিগত ২০ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান করে চলেছে।

তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে মিথ্যাচার করছেন বহিস্কৃত ট্রাস্টি নুরুল করিম। ২০১৫ সালে তিনি ট্রাস্টের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন, যা পরবর্তীতে আদালত কর্তৃক মিথ্যা প্রমানিত হয়। এবং সর্বসম্মতিক্রমে ট্রাস্ট তাকে বহিষ্কার করে। এর পর থেকে নুরুল করিম জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্ট-এর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। আমরা এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে ড. সানাওয়ার বলেন, মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ মান্নান মহোদয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার থেকে জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্ট ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা পায়নি। পেয়েছে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। যা এক্সিম ব্যাংক জগন্নাথপুর শাখায় জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রস্টের একাউন্টে জমা হয়েছিল। এই টাকা রিসোর্স সেন্টার নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে যার নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। রিসোর্স সেন্টার নির্মাণের কাজ স্থানীয় নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে তদারকি করা হয় বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন সানাওয়ার।

ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে নুরুল করিমের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা উল্লেখ করে সানাওয়ার বলেন, হাসনাত আহমদ চুনু ৪ শতাংশ ভূমি ট্রাস্টে দান করেছেন এবং অবশিষ্ট ১০ শতাংশ ভূমি ট্রাস্ট এবং ট্রাস্টি আনোয়ার আলী, মুজিবুর রহমান মুজিব এবং এম হোসেনের মাধ্যমে যৌথভাবে ক্রয় করা হয়েছে।

সংগঠনের ৫ ট্রাস্টি ব্যাংক থেকে ১ কোটি টাকা ঋণ তুলেছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে সানাওয়ার বলেন, এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা কারন ২০১০ সালে জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্ট এর স্বনামধন্য সভাপতি ছিলেন এস আই আজাদ আলী, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জুনেদ আহমদ এবং ট্রেজারার ছিলেন আব্দুস শহীদ। অভিযুক্ত ৫ ব্যক্তি ঐ সময়কার কমিটিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন না।

সংবাদ সম্মেলনে সানাওয়ার আরো বলেন, এ বছর বাংলাদেশে গরিব মেধাবি শিক্ষার্থীদের ২৫ লক্ষ টাকা বৃত্তি বিতরণ বানচালের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন নুরুল করিম। সৌভাগ্যবশত ১০ থেকে ১৫ জন ট্রাস্টি এ সময় দেশে অবস্থান করায় জরুরি মিটিং করে রেজুলেশন নিয়ে তার হীন চেষ্টাকে ব্যর্থ করে গরিব মেধাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সফলভাবে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়। বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান। বৃত্তি অনুষ্ঠান বানচালের জন্য নুরুল করিমের সাথে জেবিবিইটির সিলেক্টেড কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হালিম জড়িত থাকায় ট্রাস্ট এর ইসি কমিটি তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। আব্দুল হালিম ও নুরুল করিম সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

মূলত বহিষ্কার হওয়ায় প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে নুরুল করিম ও আব্দুল হালিম ট্রস্টের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন এমন মন্তব্য করে সানাওয়ার বলেন, নুরুল করিম সম্পর্কে সকলের পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। এই সেই নুরুল করিম যিনি নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসার মালিক ছিলেন। উনার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘আনিছ-দেইছনা’। তিনি ভিন্নরূপে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা করে বর্তমানে লন্ডন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
সানাওয়ার জানান, নুরুল করিম ট্রাস্টের ১৪জন ফাউন্ডার ট্রাস্টির একজন নন। তিনি পরে ট্রাস্টি হয়েছিলেন। বর্তমানে তার কৃতকর্মের জন্য বহিষ্কার রয়েছেন। নুরুল করিম জেবিবিই ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি নন। ৫বৎসর আগে ট্রাস্ট তাকে কৃতকর্মের জন্য পারমানেন্টলি বহিস্কার করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখতেছি নুরুল করিম ইছহাকপুরে অবস্থান করে বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপ করতেছেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি ইছহাকপুরে মসজিদ ও মাদ্রাসার জায়গা আত্মসাৎ করে একটি বিল্ডিং নির্মাণ করছেন এবং সেটা নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা চলতেছে। নুরুল করিম অবৈধ জালিয়াতি ব্যবসা, মানি লন্ডারিং ও মানব পাচার এর কারণে সিলেট এয়ারপোর্টে ধরা পড়েন এবং তার জেল/হাজত হয় বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন ড. সানাওয়ার চৌধুরী।

মানি লন্ডারিং করে টাকা পাঠানোর বিষয়ে নুরুল করিমের অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে সানাওয়ার বলেন, সত্য হচ্ছে, ট্রাস্টিদের একমাত্র ফি বাবদ সব টাকা ইসলামী ব্যাংকে ইউকে ও দেশ থেকে জমা দেয়া হয়েছে। এখানে ফি ছাড়া বাহির থেকে কোন টাকা আসারও সুযোগ নাই আবার যাওয়ারও সুযোগ নাই। সুতরাং মানি লন্ডারিং এর প্রশ্নই উঠে না আর বাংলাদেশ সরকারের ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা চেকের মাধ্যমে ট্রাস্ট এর একাউন্টে জমা হয়েছে এবং এর প্রমাণ রয়েছে।

তিনি বলেন, নুরুল করিম জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্ট এর ট্রাস্টি ছিলেন। কিন্তু তিনি বিভিন্ন সময়ে ট্রাস্টের ট্রেজারার/ সেক্রেটারি/ চেয়ার পদে ইলেকশন করে বারবার পরাজিত হয়েছেন। এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে ২০১৫ সালে দেশে এসে ১) হাসনাত আহমদ চুনু, ২) এন এইচ লালা মিয়া, ৩) এফ রহমান ও ৪) ব্যাংক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় হেরে আর কোন কিছু করতে পারেননি।

জুম অ্যাপসের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়েছিলেন, ট্রাস্টের ফাউন্ডার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান এম এম নূর, ফাউন্ডার সেক্রেটারি মহিব চৌধুরী, ফাউন্ডার ট্রেজারার এস আই আজাদ আলী, সাবেক চেয়ার সাজ্জাদ মিয়া এমবিই ও প্রথম বাঙ্গালি মেয়র গোলাম মর্তুজা ছাড়াও প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটির প্রথম চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, বর্তমান সেক্রেটারি হাসনাত আহমদ চুনু, বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান, সদস্য এন এইচ লালা মিঁয়া, সাবেক সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান মুজিব, বর্তমান ট্রেজারার জগলু মিয়া। তারা প্রত্যেকেই নুরুল করিমের মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্ট সরকারের কাছ থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা পেয়েছে।

মানহানীকর এ সকল কর্মকাণ্ডের জন্য নুরুল করিমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে সংগঠনের কর্মকর্তারা বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই ট্রাস্ট এর বিরুদ্ধে হিংসা ও মিথ্যা অপ-প্রচারের বন্ধ না হলে অচিরেই দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...