কাফালা প্রথার অবসান করার উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব সরকার

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২০, ৫:৪৩ অপরাহ্ণ

‘কাফালা’ (কোনো একজন ব্যক্তির অধীনে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ) দেওয়ার এই বিধান সৌদি আরবের শ্রমবাজারে বহুল পরিচিত শব্দ। এই চুক্তির নিয়মের কারণে সৌদি আরবে কর্মরত প্রায় এক কোটি বিদেশি শ্রমিকের জীবনের নানা সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়োগদাতার হাতে। সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা সেই কাফালা প্রথার অবসান করার উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব সরকার। ফলে আগামী মার্চ থেকে এ পদ্ধতির অবসান হতে যাচ্ছে।

সৌদি আরব সরকারের মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি শ্রম আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে করে বেসরকারি খাতে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকেরা তাদের চাকরি পরিবর্তন এবং নিয়োগদাতার অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরব ত্যাগের স্বাধীনতা পাবেন। সৌদি সরকার বলছে, এ নতুন নিয়মের মাধ্যমে তারা কাজের পরিবেশের উন্নয়ন ও দক্ষতা বাড়াতে চায়। সংশোধনী আইন অনুযায়ী প্রবাসী কর্মীরা কাজের পরিবর্তন করতে পারলেও সেক্ষেত্রে তাদের কিছু শর্ত মানতে হচ্ছে। নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া যেসব শর্তের আওতায় প্রবাসী কর্মীরা সুবিধা পাবেন সেগুলো হলো:

*সৌদি আরবে পৌঁছানোর তিন মাস পর নিয়োগদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কাজের চুক্তিপত্র দিতে ব্যর্থ হলে কাজ পরিবর্তন করতে পারবেন।

* টানা তিনমাস কোনো কর্মীকে চুক্তিপত্রে উল্লেখিত বেতন ভাতা না দিলে ওই কর্মী চাইলে অন্যকাজ করতে পারবেন।

* নিয়োগদাতা অবৈধ মানবপাচারে জড়িত থাকার প্রমাণ যদি কর্মী দেখাতে পারেন তবেও কাজ পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন।

* ইকামা অর্থাৎ কর্মী ভিসার আওতায় সৌদি আরবে অবস্থানের সময় পেরিয়ে গেলে মালিকের অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরব ত্যাগ করতে পারবেন।

* ভ্রমণ, কারাবাস, মৃত্যু বা অন্য কোনো কারণে যদি নিয়োগদাতা অনুপস্থিত থাকেন। মালিকের অসাধুতা অবলম্বনের অভিযোগ যদি প্রবাসী কর্মী করেন এবং তিনি যদি সেই অন্যায়ে জড়িত না হোন, সেক্ষেত্রে তার নিরাপত্তা বিবেচনায় কর্মস্থল পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন।

* কর্ম পরিবেশ নিয়ে মালিকের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে এবং অনুরোধ সত্তেও নিয়োগদাতার প্রতিনিধি সেই বিরোধ অবসানের শুনানি গ্রহণ করতে পর পর দুইবার ব্যর্থ হলে বা শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে কাজের পরিবর্তন করতে পারবেন।

* বর্তমান নিয়োগদাতা যদি কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রেও কাজের পরিবর্তন করতে পারবেন। শর্ত মানতে হবে বিদেশি কর্মী নিয়োগকারীদেরও।

জনশক্তি রফতানিতে সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক দেশটিতে নানা পেশায় যুক্ত রয়েছেন। দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের যোগানও সেখান থেকেই আসে। আবার সৌদি আরবে এসে প্রতি বছর বহু কর্মীকে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরার চিত্রও রয়েছে। কারণ দেশটিতে কর্মীরা যে চুক্তিতে কাজে যাচ্ছে সেই ‘কাফালা’র কারণে নানা জটিলতায় পরে তাকে দেশে ফিরতে হয়। চলমান কাফালা নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ রয়েছে। তাদের মতে বর্তমানে চালু কাফালা প্রথা শ্রমিকদের নির্যাতন ও শোষণের সুযোগ করে দেয়।

এ প্রসঙ্গে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘সৌদি আরবের এই সিদ্ধান্ত সময় উপযোগী। এতে করে প্রবাসী শ্রমিকদের টিকে থাকার পথ সুগম হবে, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন।তবে দালালদের খপ্পরে পড়ে যেন কোনো কর্মী বিপদে না পরে সেদিকে সতর্ক থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে আগামী বছরের মার্চ থেকে সৌদি আরবে কাফাল বা কাজের অনুমতি পদ্ধতি বাতিল করার কথা জানা গেছে। দেশটির সম্পদ এবং সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে এই উদ্যোগের কারণে সৌদি আরবে কাজের পরিবেশ ও দক্ষতা বাড়িয়ে তুলবে এবং এ ক্ষেত্রে শুরু হওয়া অনুরূপ উদ্যোগ পরিপূরক হবে।

আইন অনুযায়ী কাফালা পদ্ধতিতে একজন কফিল বা নিয়োগকর্তা কোনো বিদেশি কর্মীকে স্পন্সর করলে সে কর্মী সৌদি আরবে যেতে পারেন এবং সেখানে যাওয়ার পর ওই নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে হয় তাকে। এক্ষেত্রে ওই কর্মীর কাজ পরিবর্তনসহ সার্বিক বিষয় নিয়োগকর্তার ওপরেই নির্ভর করে। সৌদি আরবে প্রায় সাত দশক ধরে চালু থাকা ওই পদ্ধতির কারণে সেখানে কর্মরত অভিবাসী কর্মীরা কোনো ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। তাদেরকে নিয়োগ কর্তার ইচ্ছামত চলতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত এই কাফালা পদ্ধতি বাতিলের দাবি প্রবাসীরা জানিয়ে আসছিলেন।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...