আখাউড়া চেকপোস্ট: করোনায় বন্ধ যাত্রী পারাপার

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

আশিকুল আলম বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে বছর দুয়েক হলো পণ্য রফতানির ব্যবসা করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের মুন্সেফপাড়ার এই তরুণ ব্যবসার পাশাপাশি ঘোরাঘুরি করতেও পছন্দ করেন। ব্যবসার কাজ শেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চের প্রথম দিকে কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু ব্যবসার কাজ এবং পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে করোনাভাইরাসের কারণে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ১২ মার্চ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশি যাত্রী পারপার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে ভারতের আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট। ফলে আর ভারতে যেতে পারেননি আশিকুল।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আশিকুলের মতো অনেকেরই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতে ব্যবসার কাজে বা ঘুরতে যাওযা হয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চেকপোস্ট থেকে বড় অঙ্কের আয় বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এখন পর্যন্ত আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে সরকার প্রায় পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে, জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে যাত্রী পারাপর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকার আয় বঞ্চিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। কবে থেকে পুরোদমে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত থেকে পণ্য আমদানি না হওয়ায় আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে সরকারের কোনো রাজস্ব আয় নেই। পণ্য রফতানি হওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা পায়। কিন্তু আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে যাত্রীদের ভ্রমণ কর বাবদ করোনার আগে মাসে অন্তত পৌনে এক কোটি টাকা জমা হতো সরকারি কোষাগারে। আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে তখন প্রতিদিন গড়ে পাঁচশ যাত্রী ভারতে যাতায়াত করতেন। বিভিন্ন উৎসবের সময়গুলোতে ভারতগামী বাংলাদেশীদের সংখ্যা এক হাজারও ছাড়িয়ে যেত। ভারত গমণের জন্য প্রত্যেক যাত্রীকেই ভ্রমণকর হিসেবে পাঁচশ টাকা দিতে হয়। ফলে আখাউড়া চেকপোস্টটি যাত্রী পারাপারে সরকারের আয়ের অন্যতম একটি উৎস।

গত ১২ মার্চ থেকে বাংলাদেশি যাত্রীদের ভারতে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার পর শুধু কূটনীতিক, অফিসিয়াল, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের ভিসাধারীদের যাতায়াত সুবিধা রাখা হয়। যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দেওয়ার সময় ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বছর শেষ হতে চললেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি যাত্রী পারপার কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়নি।

সুমন রায় নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক যুবক জানান, ভারতে প্রবেশের জন্য এক বছরের মাল্টিপল এন্ট্রির ভিসা আছে তার। এই ভিসা দিয়ে আখাউড়া চেকপোস্ট ব্যবহার করে প্রায়ই আগরতলায় যেতেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর চেকপোস্ট বন্ধ থাকায় তিনি আর ভারতে যেতে পারেননি। এখন ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।

মো. সোহেল মিয়া নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সরকারপাড়া এলাকার এক তরুণ জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা যেতে যত সময় লাগে, তারচেয়েও কম সময়ে আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে আগরতলায় যাওয়া যায়। সেজন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা বা ঘোরাঘুরির জন্য প্রায়ই আগরতলায় যাওয়া হতো তার। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর আর আগরতলায় যাওয়া হয়নি। কবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে- সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন তিনি।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, দুই দেশের চেকপোস্ট দিয়ে এখন শুধু আটকে পড়াদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে। তবে সম্প্রতি চিকিৎসা ভিসাধারীদেরও ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই কম। একদিন পর পর দুই থেকে তিনজন চিকিৎসা ভিসাধারীদের ভারতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।

গত ৭ মার্চ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে এক হাজার ২৭৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিজ দেশে ফিরেছেন। তারা করোনাভাইরাসের কারণে ভারতের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছিলেন। এ সময়ের মধ্যে ভারতে গমন করেছেন শুধু ১০৯ বাংলাদেশি। একই সময়ে ৮২৪ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন এক হাজার ৩৬৬ জন। আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে ভারত গমনকারী প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকেই পাঁচ শ টাকা করে ভ্রমণ কর পেয়েছে সরকার।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের ইনচার্জ আব্দুল হামিদ বলেন, আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে পারাপার হওয়া যাত্রীদের সিংহভাগই পর্যটক ভিসাধীরা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটক ভিসাধারীদের প্রবেশাধিকার স্থগিত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে যারা চিকিৎসা ভিসা নিয়েছেন- তাদেরকে ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে যারা ভিসা নিয়েছিলেন তারা প্রবেশ করতে পারছেন না।

কবে নাগাদ যাত্রী পারপার কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে সে সম্পর্কে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানায়নি আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেহেতু আবার বাড়ছে, সেহেতু এ বছর আর যাত্রী পারাপার কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না, বলেন আব্দুল হামিদ।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...