সব
স্বদেশ বিদেশ ডট কম
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। ১৯২৪ সালের এই দিনে নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন এসএম সুলতান।
রাজমিস্ত্রি বাবা মেছের আলীর সন্তান লাল মিঞার (সুলতান) মাঝে শৈশবেই চিত্রাঙ্কনের প্রতিভা দেখা যায়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালে লাল মিঞা নড়াইলের তৎকালীন জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের দৃষ্টিতে পড়েন। তিনি সুলতানকে কলকাতায় নিয়ে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও শিল্প-সমালোচক কলকাতা আর্ট স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য অধ্যাপক সায়েদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
একাডেমিক যোগ্যতা বিচার না করেই ১৯৪১ সালে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অষ্টম শ্রেণি পাস সুলতানকে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৪ সালে কলেজের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান দখল করে চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হন সুলতান। কিন্তু প্রথাগত শিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারেননি তিনি। ছাত্রাবস্থায় তিনি কলেজ ছেড়ে কাশ্মিরের পাহাড়ি অঞ্চলে উপজাতিদের সঙ্গে বসবাস ও তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে চিত্রাঙ্কন শুরু করেন।
১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় সুলতানের প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তনের লাহোরে আরেকটি চিত্র প্রদর্শনী হয় তার। চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ।
১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমেরিকা যান সুলতান। এরপর ইউরোপে বেশ কয়েকটি একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এ সময় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লীসহ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের ছবির পাশে এসএম সুলতানের ছবি স্থান পায়।
১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই দ্য ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্বোধন করেন যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইনাম আহম্মদ চৌধুরী।
১৯৮৭ সালে সুলতানের শিশুস্বর্গ তৈরি শেষ হয়। অবশ্য অনেক আগেই স্বপ্নের শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি এবং সুরযন্ত্র বাজাতেও পটু ছিলেন তিনি। সুলতান বিষধর সাপ, ভাল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিগ, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশুপাখি পুষতেন। সুলতান হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি পছন্দ করতেন না।
চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।
এছাড়াও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যান অব দ্য ইয়ার, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকেম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর নড়াইলে প্রিয় জন্মভূমিতে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
প্রাণঘাতি মহামারি করোনার জন্যে এবারও এস এম সুলতানের জন্মবার্ষিকী সীমিত আকারে পালিত হবে। দিনটি পালন উপলক্ষে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, জেলা প্রশাসন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
Developed by:
Helpline : +88 01712 88 65 03