সব
হোসেন তওফিক চৌধুরী
সাংবাদিকতার ইতিহাসে সুনামগঞ্জের অবদান স্বমহিমায় উদ্ভাসিত এবং গৌরবোজ্জল। বিগত ১০০ বছরের সাংবাদিকতার ইতিহাস পর্যালোচনায় প্রত্যক্ষ করা যায় সুনামগঞ্জের মতো নিভৃত এলাকার কৃতি সাংবাদিকগণ সাংবাদিকতার শীর্ষে অবস্থান অলংকৃত করে অবদান রেখে যশস্বী হয়েছেন স্বরণীয়-বরণীয়। বর্তমান সময়েও এই ধারা স্বগৌরবে অব্যাহত ছিল। সালেহ চৌধুরী, হাসান শাহরিয়ার ও পীর হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ সাংবাকিতার শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান নিয়ে অবদান রেখেছেন। এই তিনজন কৃতি-বরেণ্য সাংবাদিক ছিলেন সুনামগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেট সহ দেশের গর্ব অহংকার।
আমাদের দুর্ভাগ্য। এই তিনজন নন্দিত সাংবাদিক প্রায় একই সাথে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। সালেহ চৌধুরী ২০১৭ সালে ৩রা সেপ্টেম্বর, হাসান শাহরিয়ার ২০২১ সালের ১০ই এপ্রিল এবং পীর হাবিবুর রহমান ২০২২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি মারা যান। তাঁদের মৃত্যুতে সুনামগঞ্জের অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তবে আশা করব আমাদের তরুণ উদিয়মান সাংবাদিকগণ স্বীয় মেধা, অধ্যবসায় এবং প্রতিভার গুণে ও ক্ষতি পুরণ করতে পারবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী “দৈনিক পাকিস্তান ও দৈনিক বাংলার” সহযোগিত সম্পাদক ছিলেন। তিনি একজন প্রখ্যাত প্রচ্ছদ শিল্পী ছিলেন। তিনি একটি বই প্রণয়ন করেছেন। হাসান শাহরিয়ার একজন আন্তর্জাতিক খ্যতিসম্পন্ন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি করাচির প্রখ্যাত দৈনিক “ডন” পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের “খালিজ টাইমস” ভারতের “ডেকান হেরাল্ড” পত্রিকা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “নিউজ উইক” এর প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি করাচি প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বৈদেশিক সাংবাদিক সংস্থা “ওকাব” এবং ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। তিনি কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়ন “সি.জে.এ” কেন্দ্রিয় সভাপতি ছিলেন। সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি তাকে ফেলোশীপ প্রদান করে। তিনি “অতীত অতীত নয়”, “যার শেষ ভাল তার সব ভাল”, “যারে দেখতে নারি তার চরণ বাকা” বই এবং “নিউজ উইক” এ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় শীর্ষক নিবন্ধ লিখেছেন।
পীর হাবিবুর রহমান রিপোর্টার থেকে কলামিস্ট হয়েছেন। তার লেখনি ছিল অত্যন্ত বেগবান ও ক্ষুরধার। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সরল ভাষায় কলাম লিখতেন। তার বিশ্লেষাত্মক লেখাগুলো ছিল আকর্ষণীয়। তিনি দৈনিক বাংলা বাজার, দৈনিক মানবজমিন, মানবকণ্ঠ, আজকের সময় প্রভৃতি পত্রিকায় কাজ করেছেন। তিনি সর্বত্র স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি ঢাকার দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার পরিমন্ডলে তিনিও শীর্ষ পর্যায়ে ছিলেন।
এই মরহুম তিন জনই সাংবাদিকায় আলোকিত অবদান রেখেছেন এবং সুনামগঞ্জের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন। কাছাকাছি সময়ে তাদের মৃত্যু আমাদের জন্য অপুরণীয় ক্ষতি। তাদের মৃত্যু সাংবাদিকতার পরিমন্ডলে এক বিরাট শূণ্যতার সৃষ্টি করেছে। তাঁদের অবর্তমানে সাংবাদিকতায় উঁচুপর্যায়ে সুনামগঞ্জের আর কেউ থাকল না। আমাদের গর্ব অহংকারের প্রজ্জলিত দীপশিখাগুলো আকষ্মিকভাবে নিভে গেল। জানিনা এই ক্ষতি ও শূন্যতা কবে পূরণ হয়ে আমাদের হৃতগৌরব কবে ফিরে আসবে।
বিগত শতাব্দীতে সুনামগঞ্জের কৃতি ও নন্দিত সাংবাদিকগণ সাংবাদিকতায় অনন্য অবদান রেখে সাংবাদিকতার ইতিহাসে স্বরণীয় হয়ে আছেন। ফজলুল হক সেলবর্ষী, মকবুল হোসেন চৌধুরী, শাহেদ আলী, মাহমুদ আলী, সৈয়দ শাহাদাত হোসেন, প্রজেশ কুমার রায়, মোহাম্মদ আব্দুল হাই প্রমুখের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। তাঁদের আলোকিত অবদান সাংবাদিকতার ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়ে আছে। তাঁরা সবাই ছিলেন পথিকৃত সাংবাদিক এবং তাঁদের পাথেয় অনুসরণ করেই আমাদের সাংবাদিকগণ স্বীয় অবদান রেখে যশস্বী হয়েছেন।
লেখক : আইনজীবী-কলামিস্ট
Developed by:
Helpline : +88 01712 88 65 03