রাজনীতিতে উত্তাপ, বাড়ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২২, ৮:০৬ অপরাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি। এরই মধ্যে রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনী উত্তাপ। দিন দিন বাড়ছে এ উত্তাপ। গত তিন চার দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া পুলিশের সঙ্গেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আবার কিছু জায়গায় বিএনপির কর্মসূচিতে সরকার দলীয় লোকজনের হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এতে উভয় দলের নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বরাবরের মত এসব সংঘর্ষের জন্য একে-অপরকে দুষছে।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন প্রতিহত করারও হুমকি দিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল। আন্দোলনের মধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করার নানা ছকও কষছে দলটি। নেতাকর্মীদের মাঠে রেখে নানা ইস্যুতে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। তৃণমূল পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।

গত বুধবার (২৪ আগস্ট) ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। বিকালে উপজেলার ডাকবাংলা বাজারে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ত্রিমোহনী বাজার হয়ে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থলে আসার সময় তাদের বাধা দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার খুলনার দিঘলিয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে ১৬ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। পথের বাজারে দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সমাবেশ করছিল। একই সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ওই বাজার থেকে এক কিলোমিটার দূরে মান্দারের বটতলায় উপজেলা বিএনপির সমাবেশ চলছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষ করে পথের বাজার এলাকায় পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ইট পাটকেল ছোড়া এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই দলের অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন।

শুক্রবার নোয়াখালীর চাটখিলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পথচারীসহ অন্তত ১৭ জন আহত হয়। তেল, গ্যাসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভোলায় ছাত্রদলের দুই নেতা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নোয়াখালীর চাটখিলে কামিল (এমএ) মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে উপজেলা বিএনপি। সভাস্থলে আসার পথে চাটখিল বাজারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাতে বাধা দেয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পথচারীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। পণ্ড হয়ে যায় সভা। ভাঙচুর করা হয় বিএনপির সভা মঞ্চ ও একটি পিকআপ ভ্যান। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে চাটখিল বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে দলের নেতাকর্মীরা।

এছাড়াও গত ২১ আগস্ট নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায়, শনিবার যশোরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে শুক্রবার চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়। উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর বাসভবনের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান সড়কে উঠতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের। সংঘর্ষে পুলিশসহ বিএনপির অন্তত ৪২ জন আহত হন।

ঘটনার পর বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আরমান চৌধুরী জানান, সংঘর্ষের পর আহত অবস্থায় ৯ পুলিশ সদস্য ও সাধারণ পোশাকের ৮/১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক আইনে করা মামলা তিনটিতে ৬৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বিএনপির মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। হামলায় উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফিজুল ইসলাম খান, মহিলা দলের নেত্রী সেলিনা রিনা, যুবদলের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জেমস, ৩০ জনের বেশি বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

বিএনপি বলছে, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নরসিংদী, খুলনা, ঝিনাইদহ গাজীপুরের কালিগঞ্জ, নড়াইল, বরিশাল দক্ষিণ ও উত্তর জেলা, পটুয়াখালী ও মুন্সিগঞ্জে বিএনপির কমর্সুচিতে আওয়ামী লীগ হামলা করেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার হীন চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, ভাংচুর, বানোয়াট মামলা দিয়ে গ্রেফতার এবং সভা-সমাবেশ পণ্ড করার কাজে সিপাহসালারের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে দাম্ভিকতা, রক্তপাত আর মিথ্যাচারকে পূঁজি করে দেশ চালাতে গিয়ে রাষ্ট্রকে গভীর সংকটে নিপতিত করেছে। অন্যায় অবিচার ও ভয়াবহ অপশাসনের বিরুদ্ধে কেউ যাতে দুঃসাহস দেখাতে না পারে সেজন্য বিএনপিকে ধ্বংস করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে সরকার। তারা বিএনপি এবং বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বানচাল করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...