নতুন সময়সূচীতে চাপ কমছে সড়কে : বদলেছে নগরজীবন

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২২, ৮:৩৬ অপরাহ্ণ

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে অফিসের নতুন সময়সূচি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করায় ঢাকার নগরজীবনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট থাকলেও বিকাল থেকে যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমেছে। আর ফেরার সূচিতে সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কর্মীদের সময় ভিন্ন হওয়ায়, অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করছেন। তবে সকালে অফিস ও বিদ্যালয়ের সময় যানজট তীব্র হওয়ায় ভোগান্তির কথাও জানিয়েছেন অনেকে।

সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নতুন সময়সূচি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২২ আগস্ট। একই দিন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার।

নতুন সূচি অনুযায়ী ২৪ আগস্ট থেকে সরকারি অফিস শুরু হয় একঘণ্টা আগে ও শেষ হচ্ছে দুই ঘণ্টা আগে। সরকারি অফিসের কর্মীদের এখন বাড়ি থেকে রওনা হতে হচ্ছে সকাল-সকাল, আবার অফিস শেষ করে ফিরছেনও আগেভাগেই। ফলে দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততায় হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে কর্মজীবীদের জীবনে।

সোমবার (২৯ আগস্ট) নিজামউদ্দিন নামের এক সরকারি চাকরিজীবী বলেন, নতুন সময়সূচি হয়ে বেশ সুবিধা হয়েছে। একদিকে বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে আমরা নিজেরাও দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারছি। আগে বাড়ি ফিরতে ফিরতেই সন্ধ্যা হয়ে যেত। এখন বিকালে বাড়ি ফিরে সন্তানদের সঙ্গে বাড়তি সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের নিয়ে বিকালে একটু খোলামেলা পরিবেশে হেঁটেও আসা যাচ্ছে। এতে তাদেরও ভালো লাগছে।

জাকির হোসেন নামে এক বেসরকারি কর্মজীবী বলেন, বিকালে এখন সরকারি এবং বেসরকারি কর্মজীবীদের ফেরার সময়টা ভাগ হয়ে গেছে। এতে করে কিছুটা সুবিধা হয়েছে। এখন সন্ধ্যায় রাস্তায় যানজট কিছুটা কম থাকে।

একটি জুতার শোরুমে কর্মরত মো. ওমর ফারুক বলেন, প্রতিদিন আগের নিয়মেই তারা কর্মস্থলে যাচ্ছেন বাসে করে। এখন সকাল ৭টা থেকে যানজট শুরু হয়। বিকাল ৩টার দিকেও একই অবস্থা। আগে সকাল ৮টা এবং বিকাল ৪টা থেকে হতো, এখন একঘণ্টা এগিয়ে এসেছে। তবে সন্ধ্যার অসহনীয় যানজট বেশ কমেছে, তাতে আগের চেয়ে আগেভাগে বাসায় ফেরা সম্ভব হচ্ছে।

তবে দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততায় ছেদ পড়ায় সামলে নিতে কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবী। সেই সঙ্গে স্কুল ও অফিস টাইম একসঙ্গে হয়ে যাওয়ায় সকালের ভোগান্তি কিছুটা বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তারা।

তারা বলছেন, আগে সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হলে যথাসময়ে অফিসে পৌঁছানো যেত। যানজট দেখা দিত ৮টার পর। এখন ৭টায় বের হলেও অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। বিভিন্ন দপ্তরের গাড়ি আগে রাস্তায় নামায় এবং গণপরিবহনেও যাত্রীদের চাপ থাকায় এমনটি হচ্ছে। অফিস শেষেও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

রামপুরা থেকে সচিবালয়ে একজন যাওয়া (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, এখন সকাল ৮টায় অফিসে যেতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হয়, আবার খুব সকালে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়। সকালে বাসে উঠতে হিমশিম খেতে হয়, যানজটও ভোগায়।

এ ছাড়া দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি এক দিন বাড়িয়ে দুদিন করার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা ২২ আগস্ট জানানো হয়। ওই দিনই শুক্র ও শনিবার বন্ধ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে কার্যকর হওয়ায় শনিবার রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের সড়কগুলোতে যানজট দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে রমনা ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জয়দেব চৌধুরী বলেন, সকাল ৮টায় যানবাহনের চাপ থাকলেও সাড়ে ৯টার পরে কমছে। বিকালে ৩টা থেকে ৭টা পর্যন্ত সড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও তা আগের চেয়ে কমেছে। তবে শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যানজট ছিল না। রবিবার একই সময় চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের যাতায়াতের কারণে সকালে যানবাহনের চাপ ছিল। সন্ধ্যায় তেমনটি দেখা যায়নি। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আগে বন্ধ হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

এদিকে, রাজধানীকে ‘বিশ্রাম’ দিতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নতুন সময়সূচির কথা জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২২ আগস্ট প্রকাশিত এই বিজ্ঞপ্তিতে দোকান-পাট, শপিং মল, মার্কেট ও বিপনিণবিতান রাত ৮টায় এবং কাঁচাবাজার, ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা রাত ১০টার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানের রান্নাঘর রাত ১০টার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হলেও খাবার সরবরাহ করা যাবে ১১টা পর্যন্ত।

এই নিয়ম ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে কার্যকর হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে রাত ১১টা পর্যন্ত দোকান-পাট, শপিং মল, মার্কেট খোলা থাকত। সে কারণে সড়কে ক্রেতা-বিক্রেতাদের যাতায়াতও ছিল মধ্যরাত পর্যন্ত। এখন নতুন সিদ্ধান্তের ফলে সন্ধ্যার পর থেকে যানজট আরো কমে আসবে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...