পাহাড়ি জঙ্গলে আস্তানা, মাসে ২০-২৫টি অস্ত্র বানাতেন জাকেরুল্লাহ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২২, ৭:৫০ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়ি এলাকা জঙ্গল চাম্বলে অস্ত্র তৈরির কারখানা তৈরি করেছেন জাকেরুল্লাহ (৫০)। ওই কারখানায় তৈরি করা অস্ত্র বিক্রি হতো স্থানীয় জলদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী এবং ডাকাতদের কাছে। অস্ত্র তৈরির জন্য ক্যাটাগরিভেদে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতো এবং ছোট ওয়ান শুটারগান তৈরি করতে পাঁচ থেকে ছয় দিন সময় নিতো। প্রতিমাসে ২০ থেকে ২৫টি অস্ত্র তৈরি করা হতো ওই কারখানায়।

বুধবার চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ। এর আগে মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে দুর্গম পাহাড়ে ওই অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র‍্যাব। গ্রেপ্তার জাকেরুল্লাহ ওই এলাকার মৌলভী নুরুল হুদার ছেলে। সেই অস্ত্র তৈরির মূল কারিগর।

র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, জঙ্গল চাম্বল এলাকায় অস্ত্রের কারখানা আছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে র‍্যাবের একটি টিম গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। যেহেতু এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং অপরিচিত কাউকে দেখলেই এই অস্ত্র তৈরির সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা সতর্ক হয়ে যেত, ফলে তাদের অবস্থান শনাক্তকরণ ছিল একটি কঠিন বিষয়। কিন্তু আমরা কৌশলে পাহাড়ি এলাকার ভেতর দিয়ে ওই এলাকায় প্রবেশ করায় তারা টের পায়নি। এরপর কারখানার অবস্থা নিশ্চিত হয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। ওখানে একটি টিনের একচালা ঘরের ভেতরে অস্ত্র তৈরির কারখানা দেখতে পাই। সেখান থেকে ১০টি অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ মূল কারিগর জাকেরুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।

লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, জাকের দীর্ঘদিন ধরে এ কাজের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। সে একটি অস্ত্র তৈরির জন্য ক্যাটাগরিভেদে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতো এবং ছোট ওয়ান শুটারগান তৈরি করতে পাঁচ থেকে ছয়দিন সময় নিতো। জাকেরুল্লাহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলের দৃষ্টি এড়াতে মাঝে মাঝে কৃষি কাজ করতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।

এরা প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী, জলদস্যু, মহাসড়কে ডাকাতি করা লোকদের কাছে অস্ত্র বিক্রি ও চালান দিতো। এরা টিম ভিত্তিক একদল অস্ত্র তৈরি করতো, আরেকদল অস্ত্রের দেশীয় সরঞ্জাম ক্রয় করতো। ওয়ান শুটারগান, রাইফেলসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র তৈরি হতো এ কারখানায়। একটা অস্ত্র তৈরি করতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হয় এদের। এখানে তারা প্রতিমাসে ২০ থেকে ২৫টি অস্ত্র তৈরি করে।

র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জাকের জানায়, তারা মূলত দুইজন কারিগর মিলে অস্ত্র তৈরির সম্পূর্ণ কাজটি করতো। একটি অস্ত্র বানাতে প্রকারভেদে ন্যুনতম ৫-১৫ দিন সময় লাগতো তাদের। স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল (বিভিন্ন সাইজের পাইপ ও লোহার টুকরা) সংগ্রহ করে এই বাড়িটিতে নিয়ে আসতো। পরে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে অস্ত্রের সকল যন্ত্রাংশ কারখানাতেই তৈরি করতো। একটি অস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য তারা গ্রাইন্ডার মেশিন, ঝালাই মেশিন, ড্রিল মেশিন, হাতুড়ি, রড কাটার, বাটালসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রাদি ওই কারখানায় ছিল। যন্ত্রগুলো পরিচালনার জন্য দূরের আরেকটি বাড়ি থেকে এই বাড়িতে তারা বৈদ্যুতিক সংযোগ টানে।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...