দেশে উন্নয়নের অদম্য গতি অব্যাহত রাখতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দেশে উন্নয়নের অদম্য গতি অব্যাহত রাখতে চাই। এ জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি দেশের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।’

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর বহুল আলোচিত ১,৪৯৩ মিটার ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের চামেলী হল থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এবং জনসাধারণের বিশেষ করে তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত থাকুক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। কারণ তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক খরস্রোতা বড় বড় নদী পাড়ি দিয়ে জীবিকা ও চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে আসতে হোত। তিনি বলেন, আমি ’৯৬ সালে বরিশালের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের জন্য শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতু নির্মাণ করে দেই এবং কীর্ত্তনখোলার ওপর ব্রিজ নির্মাণকাজ হাতে নেই। শেখ হাসিনা বলেন, গাবখান ব্রিজও আওয়মী লীগ সরকারেই করা। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও একের পর এক সেতু আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর উপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের ফলে ঢাকার সঙ্গে পিরোজপুরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ পিরোজপুরের তাজা পেয়ারা এবং আমড়া রাজধানীতে বসেই পাবে। এই অঞ্চলের শীতল পাটিও বিখ্যাত। জেলার বাসিন্দারা অন্যান্যদের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করতে পারে, যা জেলা ও অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ব্যাপক অবদান রাখবে।

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮৯৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ নির্মাণ করে। চীন সরকার সেতুটির জন্য প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে । সেতুটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, মংলা সমুদ্র বন্দর এবং দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তৃতা করেন। সড়ক পরিবহন ও সহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী অনুষ্ঠানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন। প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও চিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

এ উপলক্ষ্যে বঙ্গমাতা সেতু এলাকায় পশ্চিম এবং পূর্বপাড়ে দু’টি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পশ্চিমপাড়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও পূর্বপাড়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরে প্রকল্প এলাকার জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সরকার পায়রা বন্দরের উন্নয়ন করবে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪-লেন বা তার উপরে উন্নীত করার মাধ্যমে সারাদেশে মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২২,০০০ কিলোমিটারে উন্নীত করেছে, পাশাপাশি ৬শ’ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪-লেন বা তার উপরে লেনে পরিণত করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, সরকার ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার র‌্যাপিড বাস ট্রানজিট, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ১০ লেনের টঙ্গী সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে আমাদের অর্থনীতি আরও গতি পাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সারাদেশে সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। তিনি ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু’ নির্মাণে সহযোগিতার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল মহল এবং চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন একদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরদিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যার সুফল আপনারা আজ পাচ্ছেন এবং আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরো উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কেননা আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করাতে সারাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাওয়াটাকে আমাদের কর্তব্য বলেই মনে করি।

দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সাগর এবং বড় বড় নদীর পাশের যে সব সৌন্দর্যমণ্ডিত জায়গা রয়েছে সেগুলোকেও কাজে লাগানোর জন্য তার সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই অঞ্চলের আর কোনো মানুষ অবহেলিত থাকবে না। তাদের আর্থসামাজিত উন্নতি হবে এবং নিজের পায়ে তারা দাঁড়াবে।

শেখ হাসিনা সারাদেশে উৎপদন বাড়ানোর এবং দেশের যুব সমাজকে উদ্যোক্ত হওয়ায় এগিয়ে আসাতে তার আহ্বানও পুণর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আপনাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে আরও উৎপাদনমুখী হতে হবে। আমাদের গবেষণালব্ধ তরিতরকারি, ফল, মূল ও সবজি এখন সারাবছর উৎপাদিত হয়। সেগুলোর যেন আরও ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়, মৎস সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাজারজাত করারও বড় একটা সুযোগ আপনারা পেয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম এবং পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ব্যবস্থা নিজেদেরকেই করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের যুব সমাজকে বলব, চাকরির পেছনে না ছুটে স্বপ্রণোদিত ব্যবসা-বাণিজ্য আপনাদের গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে আপনারাই অপরকে চাকরি দিতে পারেন।

তিনি করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনীতির নাজুক অবস্থার উল্লেখ করে সকলকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শেরও পুনরোল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ, পানি জ্বালানির ব্যবহারে অনেক উন্নত দেশ যেখানে হিমসিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহারে সকলকেই সাশ্রয়ী হতে হবে। এতে করে বিল যেমন কম আসবে, তেমনি দেশের জন্যও মঙ্গলজনক হবে।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জাতির পিতা বলেছিলেন ‘আমার মাটি আছে, মানুষ আছে তা দিয়েই আমি এই দেশকে গড়ে তুলবো’ সে কথার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমিও দৃঢ়ভাবেই তা বিশ্বাস করি। এই মাটি ও মানুষ দিয়েই এ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সক্ষম হব। জাতির পিতার কন্যা বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে জাতির পিতার যে চিন্তা চেতানা ও আদর্শ ছিল সেটাই আমাদের চলার পথের পাথেয়। আর আমরা চাই, আমাদের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে।

সূত্র : বাসস

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...