চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে নোঙর করল ভারতীয় ট্রানজিট জাহাজ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:২১ পূর্বাহ্ণ


বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ট্রানজিট চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম বন্দরে ভারতের পণ্য নিয়ে এসে পৌঁছেছে ‘এমভি ট্রান্স সামুদেরা’ নামের একটি জাহাজ। মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে কার্গো জাহাজটি বন্দরের এনসিটি জেটিতে নোঙর করে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দর হতে শনিবার যাত্রা করে ‘এমভি ট্রান্স সামুদেরা’ জাহাজ। জাহাজটির একটি কনটেইনারে আছে ট্রানজিট পণ্য। চট্টগ্রাম বন্দরে ভারতীয় টাটা স্টিলের এসব পণ্য খালাস হয়ে বাংলাদেশী যানবাহনে কনটেইনারে (নম্বর: ভিএসটিইউ২০৩১০৯০) ২৫ টন টিএমটি বার বা রড ভারতের শ্যাওলা স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতের আসাম রাজ্যে পাঠানো হবে। আবার ফিরতি পথে কনটেইনারটিতে ভারতের ডাউকি এলসি স্টেশন হতে পণ্য বোঝাই করে তামাবিল হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে কলকাতা পৌঁছবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, ট্রানজিট সুবিধায় পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দি ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ শীর্ষক চুক্তি হয়েছিলো ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর।

এ চুক্তির আর্টিক্যাল ২ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর উভয় দেশের মধ্যে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষর হয়। চুক্তিটির আওতায় ২০২০ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া-আগরতলা রুটে একটি পণ্য চালানের প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রানজিট সম্পন্ন হয়েছিলো। ওই সময় ভারতীয় পণ্য বোঝাই চারটি কনটেইনার নিয়ে বাংলাদেশী জাহাজ ‘এমভি সেঁজুতি’ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিলো।

জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক আদেশে ট্রানজিটের পরীক্ষামূলক দুটি চালানের জন্য সাতটি খাতের মাশুল নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর মধ্যে টনপ্রতি ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ২০ টাকা, সিকিউরিটি খরচ ১০০ টাকা, এসকর্ট বাবদ খরচ ৫০ টাকা, বিবিধ প্রশাসনিক খরচ ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ টনপ্রতি কাস্টমস খরচ ও মাশুল হিসেবে আদায় হবে ৩০০ টাকা। এ হিসাবে ২৫ টন রডবাহী এক কনটেইনারের চালানে কাস্টমস পাবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। এর বাইরে প্রতি কন্টেইনার প্রসেসিং ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫৪ টাকা। অর্থাৎ এক কন্টেইনারের চালানে কাস্টমস রাজস্ব পাবে ৭ হাজার ৭৫৪ টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির অধীন গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষামূলক চালানগুলোর চলাচল নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পণ্য চালান দেশে আসার পর এক সপ্তাহের ভেতর বাংলাদেশ ত্যাগ করবে, তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হলে এ সময়কাল বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। পণ্য চালান চট্টগ্রাম বন্দর হতে প্রস্থান বন্দর পর্যন্ত পরিবহনকালে এসকট কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবে।

এমভি ট্রান্স সমুদেরা জাহাজের শিপিং এজেন্ট ম্যাঙ্গো লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল সুজন ভূঁইয়া জানান, কলকাতা বন্দর থেকে মোট ১২৪ একক আমদানি পণ্য বোঝাই করে জাহাজটি আজ রাত ৮টায় চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে। এর মধ্যে একটি কনটেইনারে ট্রানজিট পণ্য আছে। বাকি কনটেইনারে পণ্যের আমদানিকারক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী।

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটির দায়িত্বে থাকা টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের চিফ অপারেটিং অফিসার ক্যাপ্টেন তানভীর হোসেন জানান, এনসিটি ১ জেটিতে মোবাইল হারবার ক্রেনের সাহায্যে দ্রুত কনটেইনার নামানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া কি গ্যান্ট্রি ক্রেন ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। রাতের মধ্যেই ১২০টি কনটেইনার আনলোড করা সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ট্রানজিট চুক্তির আওতায় আমদানি-রপ্তানি দুই ধরনের পণ্য উঠানামায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার একক আমদানি-রপ্তানি-খালি কনটেইনার ওঠানামা করছে। ফলে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য অনায়াসেই এই বন্দরে ওঠানো-নামানো সম্ভব।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...