দেশে ৩৬৪ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৬:৪১ অপরাহ্ণ

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দেশে ৩৬৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন।

আত্মহত্যাকারীর মধ্যে ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী। ৭৬ জন কলেজপড়ুয়া, ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এবং ৪৪ জন মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ছিলেন।

শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যটি প্রকাশ করে সংগঠনটি। দেশের স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ জরিপ করা হয়।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। মোট আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ১৯৪ জনই স্কুলশিক্ষার্থী। একইসাথে ১৪-১৬ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার রয়েছে শীর্ষ স্থানে। জরিপ অনুযায়ী এ বয়সী আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা ১৬০। অবাক করার বিষয় হলো ৭ বছরের শিশুও আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গত আট মাসে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জনই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে ছেলে ৬০ শতাংশ এবং মেয়ে ৪০ শতাংশ। কলেজপড়ুয়াদের মধ্যে ৭৬ জন এ পথ বেছে নিয়েছে, যার মধ্যে ৪৬.০৫ শতাংশ ছেলে এবং ৫৩.৯৫ শতাংশ মেয়ে।

সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী গত আট মাসে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩২.৯৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬৭.০১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।

এদিকে এ সময়ের মধ্যে মাদ্রাসাপড়ুয়া ৪৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার করে। এদের মধ্যে ৩৯.২৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬০.৭১ শতাংশ মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি ডিভিশন) আজিজুল হক মামুন এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।

সংগঠনটি ১৫০টা জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার তথ্য থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করেছে। ২০২১ সালে ১০১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

আত্মহত্যাকারীদের অবস্থান বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। ঢাকায় গত ৮ মাসে শতকরা ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রস্তাবনা-

আত্মহত্যা মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন।
পাঠ্যপুস্তকে মানসিক শিক্ষাকে এবং মনের যত্নের কৌশলগুলোকে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা।
স্কুল-কলেজের অভিভাবক সমাবেশের আলোচিত সূচিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যা সম্পর্কিত এজেন্ডা রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রদান।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও আত্মহত্যা প্রতিরোধে সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা।
প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রদান।
সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা।
হতাশা, আপত্তিকর ছবি, আত্মহত্যার লাইভ স্ট্রিমিং, জীবননাশের পোস্ট ইত্যাদি চিহ্নিত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ টুলস ব্যবহার করা।
আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবার ও পরিচিতজনদের দায় অনুসন্ধানে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকা।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত ও সহজলভ্য করতে একটি টোল ফ্রি জাতীয় হট লাইন নম্বর চালু করা।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...