সব
স্বদেশ বিদেশ ডট কম
দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। আছে আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ নানা সুবিধা। খরচও সাধারণ মানুষের নাগালে। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভরসা নেই জনগণের। চিকিৎসকদের ওপর আস্থাহীনতা, দীর্ঘসূত্রতা আর ভোগান্তির কারণে বাড়ছে বিদেশমুখিতা। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যাণ্ডসহ ১৯টিরও বেশি দেশে বছরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন ৮ লাখেরও বেশি মানুষ; যাদের অধিকাংশের গন্তব্য ভারতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশে সরকারি হাসপাতালের শয্যাবৃদ্ধি, নতুন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ বাড়লেও চিকিৎসার মান আশানুরুপ না হওয়ায় বাড়ছে এ প্রবণতা।
অন্যদিকে, কম টাকা খরচ করে প্রতিবেশী দেশে সুচিকিৎসাও মিলছে। যদিও জটিল রোগ ছাড়া থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারতে চিকিৎসা নিতে গেলে আনুমানিক ১ লাখ খরচ হয়। তবে ভারতে ট্রেন বা বাসে গেলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে।
জানা গেছে, দেশে ৬৫৪ সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫১ হাজার ৩১৬টি। আর বেসরকারি পাঁচ হাজারেরও বেশি হাসপাতালে শয্যা আছে এক লাখ পাঁচ হাজারের ওপরে। এর বাইরে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল।
স্বাস্থ্যখাতে জনবল ও অবকাঠামো বাড়লেও চিকিৎসার জন্য কমছে না বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসা সেবায় কিছুটা উন্নতি হলেও অব্যবস্থাপনা ও মানসম্পন্ন চিকিৎসার ঘাটতি রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের বাইরে পর্যটক ভিসায় গিয়ে চিকিৎসা ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশে চিকিৎসা বাবদ প্রকৃত ব্যয় আরো কয়েক গুণ বেশি।
সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপের কারণে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতাল মানসম্পন্ন চিকিৎসা দিলেও তারা বেশ ব্যয়বহুল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি। পাশাপাশি বিশ্বের নামকরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে এই বিপুল অর্থ দেশে রাখা সম্ভব।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা রয়ে গেছে। দেশীয় চিকিৎসাসেবার দুর্বলতার কারণেই মানুষ বাইরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। এ ছাড়া চিকিৎসকের তুলনায় রোগী অনেক বেশি। এখন বেসরকারি হাসপাতালেও রোগীর উচ্চচাপ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকারি হাসপাতালে সেবার মান আমাদের চেয়েও খারাপ। তবে প্রাইভেট হাসপাতালে সেবার মান অনেক উন্নত। আমাদের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবার মান উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আস্থাহীনতা আছে এটা সত্য, তবে আমাদের দেশের মানুষের সক্ষমতা বেড়েছে, এটাও মানতে হবে। এদিকে, ভোগান্তির বৃত্তে লাইসেন্স প্রক্রিয়া থাকায় দেশের ৯৪ ভাগ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানই রয়ে গেছে অনুমোদনহীন। ফলে এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেও চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নন অনেক মানুষ।
আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণা বলছে, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সেবার মান উন্নয়নের অন্যতম উপায় নিবন্ধন। কিন্তু এটি উপেক্ষিত হওয়ায় বেসরকারিভাবে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে কীভাবে?
সূত্র জানায়, সারাদেশে ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এক বছরে বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স গ্রহণ নিয়ে গবেষণা চালায় আইসিডিডিআর,বি। ১ হাজার ১১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইসেন্স ছিল মাত্র ৬৬টির। শতকরা হিসাবে যা ৬ ভাগ। ৫৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেরই নতুন লাইসেন্স বা লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়াধীন ছিল। এছাড়া ৩৫ শতাংশ আবেদনই করেনি।
গবেষণায় উঠে আসে, মূলত ট্যাক্স-ভ্যাট সার্টিফিকেট, পরিবেশ ছাড়পত্র ও নারকোটিক্স সার্টিফিকেট না থাকার কারণেই লাইসেন্স নিয়ে এই জটিলতা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল) ডা শেখ দাউদ আদনান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকারের যারা লোকাল মেডিকেল ডিল করে তাদের সবার সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যদি একটা মিটিং করা যায়, যেখানে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মতোই তারা যেকোনো সার্ভিসগুলা একবারেই খুব অল্প সময়ে কোয়ালিটির সঙ্গে পেতে পারে। প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো বসিনি। অভিযানের পর লাইসেন্স ছাড়া কোনো হাসপাতাল পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আহমেদুল কবির বলেন, আমরা বলেছি আমরা সাহায্য করতে এসেছি। তার যদি অপারেশন থিয়েটারের পরিবেশ ঠিক না থাকে তাহলে সেটা আমরা ঠিক করে দেব। যদি যথাযথ অনুমোদন না থাকে সেটা আমরা করে দেব। চিকিৎসক আনা ও প্রোপার পরিবেশ করা ওনার দায়িত্ব।
Developed by:
Helpline : +88 01712 88 65 03