ওজোন দিবস আজ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ

অত্যধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও বনভূমি উজাড়, প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার আমাদের নিয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন, সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, শিল্প-কারখানার বর্জ্য, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া প্রতিনিয়ত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। মূলত গোটা বিশ্ব আজ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে পদানত। এই অবস্থায় বিশ্বমানবের প্রার্থনা ‘মানবিক বোধ জাগ্রত হোক সবার, শীতল হোক ধরিত্রী। পূর্ণপ্রাণে বিকশিত হোক এ পৃথিবীর প্রাণী, পরিবেশ, মানুষ।’ বলা যায়, গতানুগতিক জীবন ধারা পাল্টে এক নতুন স্বাভাবিক জীবনের অপেক্ষায় মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে আজ পালিত হবে ‘বিশ্ব ওজোন দিবস’।

ওজোন স্তরের ক্ষয় ও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা তৈরিতে প্রতি বছর ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ওজোন দিবস পালন করা হয়। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বায়ুমণ্ডলের ওজনস্তর সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। প্রতিনিয়ত ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (সিএফসি) গ্যাসসহ অন্য ওজোনস্তর ক্ষয়কারী গ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে ওজোনস্তর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে পৃথিবী আরো বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ১৯৮৭ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর সুরক্ষার জন্য মন্ট্রিল প্রটোকল মেনে চলার জন্য পৃথিবীর সব রাষ্ট্র একমত হলেও উন্নত দেশগুলো তা বাস্তবায়ন করছে না বলে অভিযোগ উঠছে দীর্ঘদিন ধরেই। উন্নত, উন্নয়নশীলসহ সব দেশকেই দ্রুত সিএফসি ব্যবহার বন্ধের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না।

পবিবেশবিদরা বলছেন, ক্ষতিকারক পদার্থ বাতাসে মেশার ফলে বায়ুদূষণ হয়। বায়ুদূষণের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, পরিবেশ এবং সম্পদও নষ্ট হয়। বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে জলবায়ুর ওপর এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনেরও কারণ হয়। শিল্প, যানবাহন, জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং নগরায়ন বায়ুদূষণের কয়েকটি প্রধান কারণ। নানা কারণে বায়ুদূষণ ঘটে যার অনেকগুলোই আবার মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। মরুভূমি অঞ্চলে ধুলোঝড় এবং অরণ্যে বা ঘাসে আগুন লাগার ফলে নির্গত ধোঁয়া বাতাসে রাসায়নিক ও ধূলিকণাজনিত দূষণ ঘটিয়ে থাকে।

লেখক ও পরিবেশবিষয়ক সাংবাদিক জেফ গুডওয়েল বলেছেন, ‘মানুষ কি একটি ব্যাঙের চেয়ে খুব বেশি সচেতন? আপনি যদি একটি পাত্রের পানির মধ্যে একটি ব্যাঙ রেখে ধীরে ধীরে পাত্রের নিচে তাপ দিতে থাকেন, তাহলে ব্যাঙ মৃদু উষ্ণতা পেয়ে আরাম অনুভব করবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে এমন একটি সময় আসবে যে ব্যাঙটি আর পাত্র থেকে লাফিয়ে বাইরে বের হতে পারবে না। ওই পানিতেই সিদ্ধ হয়ে মারা পড়বে। আমরা মনুষ্য সমাজও হুবহু একই কাজ করছি।’

জাতিসংঘের মহাসচিব, অসংখ্য পরিবেশবিদ, পরিবেশ বিজ্ঞানী, পরিবেশবাদী সংগঠন পৃথিবী ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু বিভিন্ন দেশ তাদের নিজ স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ডাক উপেক্ষা করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, এটা একটি কন্সপিরেসি থিওরি!

এদিকে, পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলো হচ্ছে- গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া, বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপাদনকারী যন্ত্র থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া, শিল্প-কারখানা এবং কঠিন বর্জ্য পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া। এছাড়া অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ক্রমবর্ধমান ফাটল সৃষ্টি হওয়াও একটি কারণ। মানবজাতি, উদ্ভিদরাজি, পশুপাখি এবং জলজ প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপর অ্যাসিড বৃষ্টি সংঘটনের মাধ্যমেও বায়ূদূষণ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে আসছে।

সাম্প্রতিককালে বিশ্বের অন্য স্থানের মতো এশিয়াতেও পরিবেশগত ইস্যুগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণ অধিকতর প্রাধান্য লাভ করেছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ অন্য বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রগুলোতে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া এবং রাজশাহী অঞ্চলের নগর এলাকায় বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যগত প্রতিক্রিয়া ঢাকার তুলনায় কম। কারণ এসব এলাকায় যন্ত্রচালিত গাড়ি যেমন কম, তেমনি শিল্প-কারখানাও অল্প। তবে ইটের ভাটা এবং রান্নার চুল্লি থেকে শহরতলী ও গ্রামীণ এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণে বায়ুদূষণ ঘটছে।

পরিবেশবিদরা আরো বলছেন, নিজের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন বাঁচানোর তাগিদেই প্রকৃতি এবং পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাস্তুতন্ত্রে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে খাদ্য, জল ও খনিজ দ্রব্যাদির জোগান ঠিক রাখে জীববৈচিত্র্য, তাকে ধ্বংস করা যাবে না। পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তন, দূষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বেশি করে গাছ লাগানো থেকে শুরু করে প্রকৃতিকে শান্ত করতে যা যা করণীয়, সবই করতে হবে। তবেই পূর্ণপ্রাণে জেগে উঠবে পৃথিবীর প্রাণী, পরিবেশ, মানুষ।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...