জ্বালানি খাতের উন্নয়নে গবেষণার উদ্যোগ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৭:১৫ অপরাহ্ণ

সংকট কাটাতে দেশজুড়ে লোডশেডিং হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। একই সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়েও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে চলমান জ্বালানিসংকট বিবেচনায় দেশকে এলএনজির মতো জীবাশ্ম জ্বালানিতে নয়, বরং আসন্ন বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য শক্তি ও দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জোর পরামর্শ দিয়েছেন টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা করার উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এজন্য হাইড্রোকার্বন ইউনিট বুয়েটের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে যৌথভাবে কাজ করার জন্য সমঝোতা স্মারকটি জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানিতে ঐতিহাসিকভাবেই দেশীয় উৎসনির্ভর ছিল। দেশীয় জ্বালানিতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে আমাদের গ্যাসের মজুত কমে আসায় আমদানিনির্ভরতা বাড়তে থাকে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের চলতি গ্যাস মজুত যখন কমে আসছিল, তখন সুযোগ থাকলেও নতুন গ্যাস মজুতের অনুসন্ধানে পর্যাপ্ত গুরুত্ব না দিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতেই সরকার বিনিয়োগ করেছে। একই সঙ্গে উৎপাদনের দিক থেকে বিদ্যুতের একটি অতি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ধরে কাজ করেছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে দেশীয় গবেষকদের কাজে লাগানোর তাগিদ ছিল দীর্ঘদিনের। এখন সেই দাবিই সরকার পূরণ করতে যাচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন অভিজ্ঞদের কাজে লাগানো যাবে তেমনি নতুনরাও শেখার সুযোগ পাবে যা ভবিষ্যতকে সমৃদ্ধ করবে।

জ্বালানি বিভাগের সবশেষ সমন্বয় সভায় বুয়েটের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করার বিষয়ে তাগিদ দেন জ্বালানি বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

হাইড্রোকার্বন ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা সমঝোতা স্মারকটি এরমধ্যে তৈরি করে জ্বালানি বিভাগে পাঠিয়েছি। জ্বালানি বিভাগ থেকে কিছু কারেকশন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো ঠিক করে আমরা বুয়েটের কাছে পাঠিয়েছি, এখন বুয়েট সম্মত হলেই আমরা সই করতে পারবো।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, জ্বালানি বিভাগের সব গবেষণা এবং পরামর্শ দেশের বাইরে থেকেই গ্রহণ করা হয়। দেশে কেউ এ ধরনের অভিজ্ঞ না থাকাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে এগুলো করা হয়।

জ্বালানি বিভাগে তেল গ্যাস অনুসন্ধান ছাড়াও তেল গ্যাস পরিবহনের মতো বিষয় রয়েছে। কীভাবে এসব বিষয়কে আরও সাশ্রয়ী করা যায় সেই চিন্তা অনেক দিন থেকে করা হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ কাজই বিদেশি প্রতিষ্ঠান করাতে সাশ্রয়ী হচ্ছে না।

হাইড্রোকার্বন ইউনিট সূত্র বলছে, বুয়েট যেখানে যেখানে গবেষণায় সহায়তা করতে পারে তা আগে চিহ্নিত করা হবে। এরপর তাদের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে। গবেষণায় যেমন জ্বালানি বিভাগের প্রতিষ্ঠান থাকবে সেই রকম বুয়েটের প্রকৌশলীরাও থাকবেন। এর মাধ্যমে নলেজ শেয়ারিংয়ের সুযোগ থাকবে। প্রয়োজনে উভয়ের মধ্য থেকে অধিকতর যোগ্যদের দেশের বাইরে ট্রেনিং দেওয়া হবে।

সূত্র বলছে, গবেষণার বিষয় বুয়েট এবং হাইড্রোকার্বন ইউনিট যৌথভাবে ঠিক করবে। এক্ষেত্রে সময়োপযোগিতা চিহ্নিত করে বিষয় নির্বাচন করা হবে।

এর আগে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি এক সেমিনারে বলেছিলেন, শুধু দেশে নয় দেশের বাইরেও এমন অনেকে রয়েছে যাদের সরকার চাইলেই কাজে লাগাতে পারেন। এটি সরকারের স্বদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তিনি বলেন, আমরা যারা দেশের বাইরে রয়েছি, দীর্ঘদিন জ্বালানি খাতে কাজ করেছি। আমরা এখনও দেশের জন্য কাজ করতে চাই।

জ্বালানি বিভাগের কোম্পানিগুলো মূলত পেট্রোবাংলা এবং বিপিসির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। হাইড্রোকার্বন ইউনিট জ্বালানি খাতের নীতি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান। মূলত তারা গবেষণার ক্ষেত্রে নিজেরা তথ্য সংগ্রহের চাইতে সেকেন্ডারি ডাটাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। এবার বুয়েটের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হলে দেশীয় গবেষকদের কাজে লাগানোর দরজা খুলবে। পরবর্তীতে জ্বালানি খাতের অন্য কোম্পানিগুলো একইভাবে এগিয়ে আসলে গবেষণার বিষয়টি আরও ত্বরান্বিত হবে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...