সৌরভ হারাচ্ছে ‘গৌরব সিলেট’

মারুফ হাসান,

  • প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২২, ৫:১৯ অপরাহ্ণ

একনজরে সিলেটকে দেখার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্মাণ করা হয় ‘গৌরব সিলেট’ প্রকল্প। বর্তমানে অযত্ন অবহেলায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এই প্রকল্পটি। ফলে ‘গৌরব সিলেট’র সৌরভ দর্শনার্থীদের মাঝে ছড়াতে পারেনি।

২০১৭ সালের মাঝামাঝি তৎকালিন জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার-এর উদ্যোগে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পটির কাজ সমাপ্ত হয়। চিত্রশিল্পী ইসমাইল গণি হিমন ও আলী দেলোয়ার-এর নকশায় দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পটির সবচেয়ে আকর্ষণ ছিলো সুরমা নদীতে ক্বীন ব্রিজ ও আলী আজমাদের ঘড়ির ‘বামন’ রূপ। আর ১৯৪০ সালে সিলেটের জেলা প্রশাসকের ব্যবহৃত সেই দূর্লভ জীপ গাড়িটি। দর্শনার্থীদের জন্য প্রকল্পটি ওই বছরের অক্টোবর মাসে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ১নং গেট দিয়ে ঢুকতেই ডান পাশের প্রায় ৩০ শতক ভূমির উপর নির্মিত হয় গৌরব সিলেট। এটি নির্মাণে জেলা প্রশাসনের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। উদ্দেশ্য ছিলো সিলেটে আসা পর্যটক ও প্রতিদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা অসংখ্য মানুষ এর সৌন্দর্য উপভোগ করবে। এক নজরে দেখে নিবে সিলেটের চা-বাগান, পাহাড়, নদী আর ঝর্ণার অপূর্ব জলরাশি। দেখে নিবে ঐতিহাসিক ক্বীন ব্রিজ ও আলী আমজাদের সেই বিখ্যাত ঘড়িটিও।

ছোট আদলে তৈরী গৌরব সিলেট’র এই স্থাপনা শুরুর দিকে দর্শনার্থীদের বেশ আকর্ষণ করেছিলো। তখন অনেক পর্যটকও গৌরব সিলেট দেখার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঢু মারতেন। সেলফি তুলে দর্শনীয় এই প্রকল্পটির সৌন্দর্য তুলে ধরতেন সোস্যাল মিডিয়ায়। এছাড়াও সিলেটের পর্যটনের অনেকগুলো বিষয় এক সাথে শিশুদের সামনে উপস্থাপনের এমন সুযোগ নিয়েছেন অনেক অভিভাবক।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গৌরব সিলেট’র লেকের পনিতে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা, ক্বীন ব্রিজটি আর আলী আমজাদের ঘড়িটিতে অযত্নের ছাপ, পাহাড়ে নেই সুবুজের সমারহ। গাছ থেকে পড়া শুকনো পাতায় ভরে গেছে আশ-পাশটা। ৮২ বছর আগের সেই জীপ গাড়িটি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি উদ্বোধনের সেই নামফলকটিরও জীর্ণ অবস্থা।

দুজন চিত্রশিল্পী গৌরব সিলেটের নকশা করেছিলেন, এর একজন ইসমাইল গণি হিমন। তিনি বলেন, গৌরব সিলেট-এর বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন সাবেক জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার। তাঁর বরাত দিয়ে হিমন বলেন, এটিতো রাহাত আনোয়ার নিজের জন্য তৈরী করেননি, করেছেন সিলেটবাসীর জন্য। এর দুরবস্থার কথা শুনে তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন।

হিমন আরো বলেন, আমি পরবর্তী দুইজন জেলা প্রশাসকের কাছেই গিয়েছিলাম। আলাপ করেছি এর রক্ষাণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার বিষয়ে। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় উনারা কেউই এটিকে গুরুত্ব দেননি। হিমন বলেন, সিলেটের প্রথম কালেক্টরের গাড়িটিও চরম অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে অথচ এগুলো সিলেটের সম্পদ।

বিষয়টি নিয়ে সিলেট পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড-এর সভাপতি হুমায়ুন কবীর লিটনের বলেন, নিসন্দেহে জেলা প্রশাসনের একটি ভালো উদ্যোগ ছিলো ‘গৌরব সিলেট’। যারা সিলেটে বেড়াতে আসবেন তারা গৌরব সিলেটে’র মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বিমোহিত হবেন। বিষয়টি ভেবেই আমরা যারা পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িতরা অনেকটাই খুশি হয়েছিলাম। বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরো প্রকল্পটি বিলুপ্তির পথে। আমরা টুরিজম সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক জনগোষ্টির পক্ষ থেকে দাবী জানাই নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে এটিকে আবারো দর্শনার্থীদের দেখার উপযোগী করে গড়ে তোলা হউক।

মাত্র ৫টি বছরের ব্যবধানে গৌরব সিলেট’র সৌন্দর্য্য ফিকে হয়ে উঠেছে। অযত্ন অবহেলায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে প্রকল্পটি। জেলা প্রশাসনের একটু নজরদারিতে গৌরব সিলেট প্রকল্পটি আবারো হয়ে উঠতে পারে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...