দিরাইয়ে আ.লীগের সম্মেলনে সংঘর্ষ, নিহত ১

সিলেট অফিস,

  • প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২২, ৬:১৭ অপরাহ্ণ

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপিকে সহকর্মীরা এভাবেই রক্ষা করেন।

দিরাইয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম আজমল চৌধুরী (৩৫)। তিনি উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের কুলঞ্জ গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে। এ ছাড়াও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও ২০ জন আহত হয়েছেন।

সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি এখন চট্টগ্রামে আছি। তবে শুনেছি হাসপাতালে আসার আগেই একজনের মৃত্যু হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, যারা আক্রমণ করেছে তাদের শায়েস্তা করার ক্ষমতা শেখ হাসিনার আছে। সম্মেলন বানচাল করার জন্য যারা অপচেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংঘর্ষে আহত একজন মারা গেছেন। পুলিশ প্রশাসনকে এর জবাব দিতেই হবে। এইখানে কারা পুলিশ কন্ট্রোল করেছে। এসব বিষয় আমরা দেখব, আপনারা নিশ্চিন্ত থাকেন।

এদিকে তাৎক্ষণিক বিবদমান দুইপক্ষই ওই কর্মী নিজেদের দাবি করেন। দিরাই থানার ওসি সাইফুল আলম আজমল হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে বলেন, সে আওয়ামী লীগের কর্মী কি না আমরা জানি না।

দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার বেলায়েত হোসেনও বললেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই আজমল মারা গেছেন।

সোমবার দিরাই উপজেলার বিএডিসি মাঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, সুনামগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা, সিলেট-সুনামগঞ্জ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর সোমবার দুপুর ১টার দিকে বিতর্কে জড়ান দুই পক্ষের সমর্থকরা। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন তারা। এমনকি মঞ্চে উপস্থিত নেতাদের লক্ষ্য করেও ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এসময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা চেয়ার মাথায় দিয়ে রক্ষা পান। ঘটনার পর প্রায় একঘণ্টা সম্মেলনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সংঘর্ষ থামার পর আবারও সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করেছেন দুইপক্ষের নেতৃবৃন্দ। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোশরাফ মিয়া বলেন, তার সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ মিছিল সম্মেলনস্থলে পৌঁছানোর পর অপরপক্ষের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে।

উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, প্রধান ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ মঞ্চে ওঠার পর মোশারফ মিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা মিছিল করে এসে মঞ্চ লক্ষ্য করে বৃষ্টির মত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। দলের কর্মীরা এসময় মানবঢাল তৈরি করে এবং মাথায় চেয়ার তুলে নেতাদের রক্ষা করেন। পুলিশের ভূমিকা এ সময় দুর্বল ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বলেছেন, যারা এই কাজ করেছে তারা আওয়ামী লীগের কেউ নয়। বিএনপি এজেন্টরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের পতন হবে।

সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, এখানের সভা শেষ করেই আমরা সুনামগঞ্জে ফিরব। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলব, নেতৃবৃন্দ সহ ঢাকায় কথা বলব। আমরা এমন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেব যাতে আর কোনো সম্মেলনে এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার কেউ দুঃসাহস না দেখায়।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ দিরাই-শাল্লায় থাকবে, এই সুনামগঞ্জে থাকবে। এখানে আব্দুস সামাদ আজাদ প্রতিনিধিত্ব করেছেন, জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাদের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই আজ যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে এবং যারা করেছেন তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হতে পারেন না। এরা কুলাঙ্গার। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলে জাতীয় নেতাদের সামনে এই ধরনের আচরণ করতে পারতো না। তারা দুই চারজন সন্ত্রাসী নিয়ে দুই চারটা ইট পাটকেল মেরে মনে করেছে আওয়ামী লীগের সভা পণ্ড করবেন। আওয়ামী লীগ তো এই রকম পার্টি না। আওয়ামী লীগ এই দেশের মানুষের শ্রম ঘাম রক্তে গড়া সংগঠন। আওয়ামী লীগ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠা সংগঠন। আওয়ামী লীগের নেতৃৃত্ব এই দেশের মহান স্বাধীনতা এসেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আজ দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত রয়েছে। কাজেই কয়েকজন লোক যদি মনে করে অন্যান্য হাইব্রিড পার্টির মতো আপনারা যা খুশি তাই করবেন, এটি অন্ততপক্ষে আওয়ামী লীগে হবে না।

ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন, এই ধরনের হামলা কেউ আশা করেনি। এত বড় স্পর্ধা। আমি ছাত্রলীগ, যুবলীগ করেছি, আজ আওয়ামী লীগ করছি, কিন্তু এই ধরনের স্পর্ধা কেউ দেখিয়েছে বলে নজির নেই।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বলেন, আমাদের ব্যাপক নিরাপত্তা ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক আছে।

প্রসঙ্গত, উপজেলায় আট বছর পর আজ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে বিবদমান দুইটি গ্রুপই নিজেদের শক্তি জানান দিতে ব্যাপক লোক জমায়েত করেছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ পেতেও মরিয়া দুই গ্রুপের শীর্ষ নেতারা।

প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও গ্রুপিংয়ের কারণে সম্প্রতি সেই অবস্থায় নেই দলটি। গেল দিরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের প্রার্থীতাকে ঘিরে দিরাই উপজেলায় আওয়ামী লীগে বিভক্তি তৈরি হয়। সংগঠনের একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়। অন্য গ্রুপে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া।

সম্মেলনে সভাপতি পদে আগ্রহীরা হলেন- আলতাব উদ্দিন, অ্যাড. সুহেল আহমদ, সিরাজ উদ দৌলা তালুকদার, মোশারফ মিয়া। এ ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহী প্রদীপ রায়, অভিরাম তালুকদার, রঞ্জন কুমার রায়।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...