অর্ধ লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণে সিলেটে আজিমুশ্বান ইজতেমা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ৫:৪৫ অপরাহ্ণ

আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৭৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আজিমুশ্বান ইজতেমা ২০২২ সম্পন্ন হয়েছে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ রোডের পারাইচকে কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে অনুষ্ঠিত এই ইজতেমায় অর্ধ লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগম ঘটে।

১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হওয়া এই ইজতেমা ১৮ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টায় আমিরে আঞ্জুমান মুফতি মুহাম্মদ রশীদুর রহমান ফারুক বর্ণভীর আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। দুই দিনব্যাপী এই ইজতেমায় ইসলামি জীবনযাপন অনুসরণ ও আত্মশুদ্ধি অর্জন বিষয়ে বয়ান পেশ করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শতাধিক ওলামা-মাশায়েখ ও বুদ্ধিজীবী। বহির্বিশ্বের একাধিক ইসলামিক স্কলারও এতে অংশগ্রহণ করেন।

ইজতেমা থেকে দেশ ও জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত বক্তব্যে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুফতি মুহাম্মদ রশীদুর রহমান ফারুক বর্ণভী বলেন, আজিমুশ্বান ইজতেমা থেকে আমরা দেশের সর্বস্তরের মুসলিম জনতাকে এই আহ্বান জানাচ্ছি যে, নিজের ও নিজের পরিবারের ঈমান-আমলের পরিশুদ্ধির জন্য ঘরে ঘরে আপনারা তালিম তথা দীনি শিক্ষার চর্চা চালু করুন। মসজিদে, কর্মক্ষেত্রে, আবাসস্থলে—দীনি তালিমের চর্চা জারি থাকলে মুসলমানদের ঈমান-আমল সংরক্ষিত থাকবে। কেউ তাদের বিভ্রান্ত করতে পারবে না।

আমিরে আঞ্জুমান বলেন, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এ অঞ্চলের প্রাচীনতম একটি অরাজনৈতিক দীনি সংগঠন। সাধারণ মানুষকে দীন-ঈমানের তালিম দেওয়া এবং তাদের মধ্যে ইসলামি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলাই এই সংগঠনের প্রধানতম কর্মসূচি।

ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত ৭৭ বছরের পুরনো এ সংগঠনের সঙ্গে প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে মুফতি মুহাম্মদ রশীদুর রহমান ফারুক বর্ণভী বলেন, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম কারও ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি নয়, কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানোর এজেন্ডাও এই সংগঠনের নেই। এই সংগঠন দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষকে এক আল্লাহর দাওয়াত প্রদান এবং তার আদেশ-নিষেধ পালনে উদ্বুদ্ধ করার কাজেই একনিষ্ঠভাবে কাজ করে থাকে।

দেশের সর্বস্তরের মুসলিম জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। দেশের প্রতিটা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সংগঠনের শাখা কমিটি গঠনের কাজ চলমান। আল্লাহর ওলিদের বরকতমণ্ডিত এই সংগঠনের বিস্তার প্রচারে আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন।

আখেরি মোনাজাতে তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে হৃদয়ভেজানো দোয়া করেন।

দুই দিনব্যাপী বিশাল এই ইজতেমায় উপস্থাপনা করেন আঞ্জুমানের যুগ্ম মহাসচিব হাফিয মাওলানা শেখ সাদ আহমদ আমীন বর্ণভী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা জাবের আল হুদা চৌধুরী, প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা শাব্বীর আহমদ ফতেহপুরী। ইজতেমা ১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও ১৫ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকেই ইজতেমাস্থলে মুসল্লিয়ানে কেরামের সমাগম ঘটতে থাকে। ফলে ১৫ ও ১৬ নভেম্বরও ধাপে ধাপে সিলেটের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখগণ তাদের উদ্দেশে ধর্মীয় দিকনির্দেশনামূলক বয়ান পেশ করেন।

১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বাদ ফজর আমিরে আঞ্জুমানের উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার আনুষ্ঠানিক সূচনা হওয়ার পর থেকে পরদিন শুক্রবার সকাল ১০টায় আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত মোট সাতটি অধিবেশনে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় শতাধিক ওলামা-মাশায়েখ বয়ান পেশ করেন। সাত অধিবেশনে ধাপে ধাপে সভাপতিত্ব করেন সিলেট বিভাগের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখ।

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ (ভারত)-এর মহাসচিব আল্লামা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী, ভারতের শাহি মুরাদাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা সাইয়্যিদ আশহাদ রশিদী, মাওলানা আব্দুল আউয়াল নারায়ণগঞ্জ, মাওলানা আব্দুর রহমান হাফিজ্জী ময়মনসিংহ, মাওলানা আব্দুল মালিক পীর সাহেব ভোলা, মাওলানা আকরাম আলী পীর সাহেব বাহাদুরপুর, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররামের খতিব মুফতি রুহুল আমীন, ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন চট্টগ্রাম, ড. মুশতাক আহমদ ঢাকা, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মাওলানা উবায়দুর রহমান বরিশাল, মাওলানা আবদুল মতীন বিন হুসাইন পীর সাহেব ঢালকানগর, মাওলানা ইসমাঈল নুরপুরী নরসিংদী, মাওলানা নূরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী, মাওলানা হামিদ জহিরী ঢাকা, মাওলানা মুশতাক আহমদ খুলনা, মাওলানা মুশতাকুন নবী কাসিমী, মাওলানা নুরুল হুদা ফয়জী বরিশাল, চট্টগ্রাম পটিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ, হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা আলী আকবর কাসিমী ঢাকা, মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ ঢাকা, মাওলানা আহমদ মায়মূন ঢাকা, মাওলানা আহমদ আলী কাসিমী, ড. শহীদুল্লাহ উজানী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান পীর সাহেব দেওনা, মাওলানা শামসুদ্দীন কাসিমী জামালপুর, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী ঢাকা, মাওলানা মুহাম্মদ আলী সিরাজগঞ্জ, মাওলানা ইমাম হুসাইন সিরাজগঞ্জ, মুফতি ফয়জুল্লাহ ঢাকা, মাওলানা আব্দুল বাসিত খান সিরাজগঞ্জ, মুফতি আবুল বাশার নুমানী ঢাকা, মুফতি জসিম উদ্দীন ঢাকা, মাওলানা জুবায়ের আহমদ ঢাকা। এ ছাড়াও শীর্ষস্থানীয় আরও অনেক উলামায়ে কেরাম বক্তব্য দেন।

আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর তরফে বয়ান পেশ করেন- নায়বে আমির মাওলানা সাঈদুর রহমান বর্ণভী, মাওলানা ওলীউর রহমান বর্ণভী, মাওলানা আবদাল হোসেন খান, মাওলানা শেখ আহমদ আফজল বর্ণভী, মহাসচিব মাওলানা অধ্যাপক আব্দুস সবুরসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলরা।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাকির হোসেন, রাজনগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ বিলাল, নাজাত ইসলামী মারকাজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ছালেহ আহমদ হামিদীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

প্রসঙ্গত, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৪ সালের বাংলার খ্যাতিমান বুজুর্গ খলিফায়ে মাদানী হজরত লুৎফুর রহমান বর্ণভী (পীর সাহেব বরুণা) সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে ইসলাহি এই সংগঠন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশে মানবতার কল্যাণ, মুসলমানদের দীন-ঈমানের সংরক্ষণ ও মানবিক মূল্যবোধের উজ্জীবনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...