ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা’র বাম্পার ফলন

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৪৪ অপরাহ্ণ

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার মালঞ্চা গ্রামের অরেঞ্জ ভ্যালি’র দার্জিলিং জাতের কমলা গাছের ডালে ডালে এবারও থোকায় থোকায় ঝুলছে বড় বড় হলুদ রঙের কমলা। কমলার ভারে হেলে পড়েছে গাছের ডালপালা। নয়নাভিরাম বাগানটি দেখে মনে হচ্ছে, এটি ভারতের দার্জিলিংয়ের কোনো এক কমলার বাগান। এ বাগান দেখতে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করেছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কমলা তোলা শুরু করেছেন বাগান মালিক। মিষ্টি ও রসালো এ কমলা বাগানেই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে। বাগান থেকে এবার ৩০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা বাগান মালিকের।

উপজেলার কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আড়াই বিঘা জমির ওপরে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান করেছেন উপজেলার বীরহলি গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আবু জাহিদ ইবনুণ ইকরাম জুয়েল। বাগানটিতে আড়াইশর মতো কমলা গাছ রয়েছে। অষ্টমবারের মতো তার এ বাগানের গাছে এবারও প্রচুর কমলা ধরেছে। কমলার রংও এসেছে লোভনীয়।

১১ বছর আগে জেলা হর্টিকালচার থেকে প্রতি চারা ৫ টাকা করে ক্রয় করে রোপণ করেন জুয়েল। যদিও তার এ বাগান করার ইচ্ছা ছিল না। শুধু হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তাদের অনুরোধে তিনি কমলার চারাগুলো কিনেছিলেন। এখন সেই আড়াইশ গাছ থেকে বার্ষিক ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করছেন কৃষি উদ্যোক্তা জুয়েল। গত বছর এ বাগান থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছিলেন তিনি। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সরবরাহ করেছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাগানে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে শেষ পর্যন্ত ২০ টাকা প্রবেশমূল্যে নির্ধারণ করেন বাগান মালিক। তার পরেও ভিড় সামাল দিতে মালিকসহ আটজনকে হিমশিম খেতে হয়েছে। বাগানের নিরাপত্তার জন্য চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

এবার ৩০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন বাগান মালিক। দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে এবার আগেভাগেই বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছেন। বাগানে প্রবেশের জন্য ২০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা করেছেন। বাগানের ভেতরে কিছু গরম কাপড় বিক্রিরও ব্যবস্থা রয়েছে। দর্শনার্থীরা কমলা বাগান দেখতে এসে বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন করার পাশাপশি স্বল্পমূল্যে পরিবারের জন্য গরম কাপড়ও কিনতে পারবেন।

উদ্যোক্তা জুয়েল জানান, তার বাগানটি দার্জিলিং জাতের কমলা বাগান। এ বাগানের কমলা স্বাদে দার্জিলিংয়ের কমলার মতো। অর্গানিক পদ্ধতিতে তিনি এ বাগান করেছেন। কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। বাগানের আড়াইশ গাছ থেকে এবার ৩০০ মণ কমলা হতে পারে বলে আশা তার। আড়াই বিঘার এ বাগানে তার খরচ হয় চার লাখ টাকা। ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলা গাছ ৫০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। এটি একটি অর্থকরী ফসল, যা খুব সহজে ও স্বল্প খরচে উৎপাদন করা যায় বলে জানান তিনি। কেউ যদি এমন বাগান করতে চায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে কমলা চাষ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান সফল এ উদ্যোক্তা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এ বাগানের কমলা খুবই সুস্বাদু ও ভালো। তাই এ বাগানের কমলা দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায় এবং সকল জায়গায় আমাদের দেশে উৎপাদিত কমলা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। তা ছাড়া এটা একটা পর্যটন শিল্প হিসেবেও কাজ করছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহরিয়ার নজির জানান, জুয়েলের কমলা বাগান একটি পরিচিত নাম ও ব্র্যান্ড। জুয়েলের মতো কেউ এমন কমলা বাগান করতে চাইলে তাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

সূত্র : দৈনিক কালবেলা

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...