তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না : মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা আবারো বলছি- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। অন্যথায় এ দেশে কেনো নির্বাচন হবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন- সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যেখানে বার বার কাটাছেঁড়া করা হয়েছে নিজের প্রয়োজনে। সেই সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলতে পারেনা। তারা এই সংবিধানের অনেক পরিবর্তন করেছে। নতুন নতুন আইন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। যেখানে ফেসবুকে পোস্ট দিলেও উস্কানি হিসেবে আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জামিন নেই। আমরা তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা চায়না। তাদের লক্ষ্য যেমন করে পারো বন্দুক পিস্তল দিয়ে ক্ষমতায় থাকো। আমরা তো তাদের চাকর নই। এই দেশের মালিক জনগণ। আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহীতে মাদরসারা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। যেই সরকার নতুন স্বপ্ন দেখাবে। এখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং নিহত সহযোদ্ধাদের রক্তের বদলা নিতে হলে আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি, লাগাতার লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, গুম, হত্যা, মামলা-হামলা, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজ সকাল ১০ টা ৩৬ মিনিটে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়। বিকাল ৪টায় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির রাজশাহী মহানগর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান মিনু, মোঃ শাহজাহান মিয়া, আব্দুল মান্নান তালুকদার, হাবিবুর রহমান হাবিব, কর্নেল এম এ লতিফ খান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, আবু সাঈদ চাঁদ, শ্রমিকদলের আনোয়ার হোসাইন, কাজী মোঃ আমীর খসরু, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের চলমান লড়াই সংগ্রামে ৬ শতাধিক নেতাকর্মী গুম হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টু সহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এতোদিন পরে সাজা দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায় সরকার। কিন্তু বিরোধী দল আরো নতুনভাবে উদ্যমী হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা লুট করে পাহাড় বানাচ্ছে আর সাধারণ মানুষকে গরিব করছে। কদিন আগেই পাবনার কয়েকজন কৃষককে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ ক্ষমতাসীনরা ব্যাংক লুট করে দিচ্ছে। খাজাঞ্চিখানা শুন্য করে দিচ্ছে কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হয় না। ইসলামী ব্যাংকের টাকা নামে বেনামে ঋণের নামে লুট করছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। তারা কেয়ারটেকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে মানুষ মেরেছে। পাঁচবার কেয়ারটেকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে সমস্যা হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই ব্যবস্থা বাতিল করেছে।

তিনি বলেন, সরকার ঢাকার সমাবেশ নিয়ে ভয় পেয়েছে। আমরা নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। তারা তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম করে ফেলেছে। তারা আতংকে ভুগছে। আমরা তো নয়া পল্টনে অসংখ্য সমাবেশ করেছি যেখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন। কই তখন তো কোনো সমস্যা হয়নি। এখন তারা জঙ্গি নাটক শুরু করেছে। নিজেদের প্রয়োজনে জঙ্গী বানায়। নিজেরাই বাস পুড়িয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ আপনারা কি এই দেশের সন্তান নন। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বাড়ি গাড়ি বানান। কেনো নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন করেন। খবরদার আর নিপীড়ন করবেন না আপনারা জনগণের সেবক। যেখানে আপনাদের উচিত ছিল সহযোগিতা করা সেখানে আপনারা পানি বিদ্যুৎ ও খাবার বন্ধ করেছেন। কেনো আপনারা এতো অমানুষ? এভাবে সমস্ত মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। আপনারা বিধান মেনে চলুন। অন্যথায় দেশের মানুষ কিন্তু কোনো অন্যায় সহ্য করবে না।

[১] [২] [৩]