নারীদের স্তন, পুরুষদের ফুসফুস ক্যানসার বেশি

দেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। তাছাড়া অধিকাংশ রোগী শনাক্তের বাইরে। তারপরও যেসব রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে তাদের মধ্যে পুরুষদের ফুসফুস এবং নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে আয়োজিত হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিবেদন ২০১৮-২০২০ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আসা প্রায় ৩৬ হাজার রোগীর ডায়াগনোসিস করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এই সময়ে ৮৩ হাজার ৭৯৫ জন নতুন রোগী এলেও ডায়াগনোসিস হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৩৩ জনের। এতে ৪২ দশমিক ৬ শতাংশের ক্যানসার শনাক্ত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনে তুলে ধরেন ইনস্টিটিউটের এপিডেমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যানসার ইনস্টিটিউটে আসা রোগীদের ৫৫ শতাংশ নারী এবং ৪৫ শতাংশ পুরুষ। নারী-পুরুষ উভয়ের সবচেয়ে বেশি ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে, যার শতকরা হার ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর লিঙ্গভেদে পুরুষ ক্যানসার রোগীদের সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ ফুসফুসের ক্যানসার পাওয়া যায়। আর নারীদের মধ্যে ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ রোগী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ২০১৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জাতীয়ভাবে একবার জনসংখ্যাভিত্তিক গবেষণা করেছিল, এরপর আর হয়নি। নতুন করে আমরা গবেষণা করার অনুরোধ জানিয়েছি। এটি হওয়া জরুরি। কিন্তু তার জন্য বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একটি গবেষণা মানে রোগীর ডায়াগনোসিস থেকে শুরু করে তার অবস্থা কোন পর্যায়ে, কোথায় গিয়ে থামতে পারে, সব লিপিবদ্ধ করা, যেটি অনেক বেশি কঠিন। কারণ, আমাদের ডায়াগনোসিস ও সুযোগ-সুবিধার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধের বিকল্প নেই জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাসও ক্যানসারের বড় একটি কারণ। কয়েক বছর আগেও এটি নিয়ে কাজ করা অতটা সহজ ছিল না। চিকিৎসাব্যবস্থাও ততটা উন্নত ছিল না। এখন পরিবর্তন হয়েছে। তবে এখনো অনেক ঘাটতি। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ইনস্টিটিউট দরকার। নতুন করে আটটি মেডিকেল কলেজ হচ্ছে, সেখানে হয়তো হবে। কিন্তু যাঁরা করবেন, তাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

শামিউল ইসলাম বলেন, ধূমপানসহ নানা অভ্যাসের কারণে নিজেরাই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হচ্ছি কি না, ভেবে দেখা উচিত। পাশাপাশি এটি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নীতিনির্ধারকদের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য এবং কোনটি চিকিৎসা ছাড়া হবে না, তা নির্ণয় করতে হবে। একই সঙ্গে পৃথক লিঙ্গ ও বয়সকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন বয়সে কোন ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, সেটি দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ার বড় একটি কারণ ক্যানসার। রাষ্ট্রের এই জায়গায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। মেডিকেল সায়েন্সেসে যেখানে প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি উন্নত হয়েছে, সেখানে এখনো আমরা পিছিয়ে। ডায়াগনোসিস করতে পারছি না। এটি কেন হবে?

[১] [২] [৩]