এলন মাস্ককে টপকে শীর্ষ ধনীর তকমা এখন ফরাসি ব্যবসায়ীর

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:০৫ অপরাহ্ণ

বেশ দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের শীর্ষ ধনীর মুকুটটি ছিল ইলন মাস্কের দখলে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি হিসাবে নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন মাস্ক। তবে, এবার তিনি তা খুইয়েছেন। তাকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথম স্থান দখলে নিয়েছেন প্যারিস ভিত্তিক বিলাসপণ্যের কোম্পানি লুই ভুইতোঁর মালিক এর বার্নার্ড আর্নল্ট

বুধবার ফোর্বসের দ্য রিয়েল টাইম বিলিওনিয়ার লিস্টে দেখা যাচ্ছে, এলন মাস্ককে হটিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর স্থান দখল করে নিয়েছেন ফ্রান্সের বিলাসবহুল পোশাক ও দ্রব্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান লুই ভুইতোঁ মালিক বার্নার্ড আর্নল্ট ও তার পরিবার। ১৮৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছেন তিনি।

দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন এলন মাস্ক। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ১৭৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানি। তার সম্পদের পরিমাণ ১৩৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও মার্কিন ই-কমার্স জায়্যান্ট আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস রয়েছেন ৪র্থ স্থানে এবং বিল গেটস ৫ম স্থানে রয়েছেন।

এলন মাস্ককে সরিয়ে বিশ্বের ধনীশ্রেষ্ঠের আসনটি দখল করা শিল্পমহলে ‘ধূর্ত’ বলে খ্যাত বার্নার্ড আর্নল্ট। মাস্কের সঙ্গে তার বয়সের অনেক তফাত হলেও কাজে বেশ মিল। বস্তুত কর্মীদের নির্বিচারে টার্মিনেট বা বরখাস্ত করার জন্য একটি ডাক নামও জুটিয়েছিলেন বার্নার্ড— ‘দ্য টার্মিনেটর’। একটি সংস্থার দখল নিয়ে তার ৯০ শতাংশ কর্মীকেই চাকরি থেকে ছাঁটাই করার পর শিল্পমহল তাকে চিনতে শুরু করে ওই নতুন নামে।

১৯৪৯ সালে ফ্রান্সের রৌবেক্স শহরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয়া আর্নল্ট, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন ফ্রান্সের ইকোল পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষা জীবন শেষে তিনি পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন, যা ছিল একটি কন্সট্রাকশন কোম্পানী। ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান আর্নল্ট এবং সেখানে তিনি এ বিনিয়োগ শুরু করেন।

পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে আর্নল্ট আবারও নিজের দেশ ফ্রান্সে ফিরে আসেন এবং একটি টেক্সটাইল কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করেন। আর এই কোম্পানিটির একটি প্রতিষ্ঠান ছিল বিশ্ব বিখ্যাত ফরাসি ফ্যাশন কোম্পানি ক্রিস্টান ডিওর যা ডিওর নামে বেশি পরিচিত। এর পর এক ব্যবসায়িক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে তিনি নিজের আওতায় নিয়ে নেন ফ্রান্সের বিলাসবহুল পণ্যের কোম্পানি মোয়েত এনেসি লুই ভূতোঁ (এলভিএমএইচ) কে।

কাতার বিশ্বকাপের একদিন আগে মেসি ও রোনালদোর ভাইরাল হওয়া ছবিটির কথা নিশ্চয় মনে আছে সকলের। যেখানে এই দুই কিংবদন্তীকে দেখা মিলে মুখোমুখি হয়ে দাবার নিপুণ চাল দিতে। আর বিরল দৃশ্যটি ছিল বিশ্বখ্যাত ফরাসি ফ্যাশনহাউজ লুই ভূতোঁ ব্যাগের প্রচারণার একটি অংশ।

ব্যাক্তি জীবনে ৫ সন্তানের বাবা ৭২ বছর বয়সী বার্নার্ড আর্নল্ট দুইটি বিয়ে করেছেন। স্ত্রী ও সন্তান সকলেই পারিবারিক ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন।

এদিকে বুধবার ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এলন মাস্ক আর বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নন। যার বড় কারণ বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ারদর পড়ে যাওয়া।

কেবল টেসলার শেয়ারের দরপতন নয়, ৪৪ বিলিয়ন ডলারে কেনা টুইটারকে শুরু থেকেই একটি লোকসানি বিনিয়োগ বলে আসছিলেন বিশ্লেষকরা। বিপুল ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই টুইটার কিনেছিলেন মাস্ক। তারপর থেকেই মাস্কের নিজের সংস্থা টেসলার লাভের অঙ্ক কমতে থাকে।

টুইটার কেনার কিছুদিনের মধ্যেই মাস্কের সম্পত্তির পরিমাণ কমতে থাকে। কারণ টেসলার শেয়ারহোল্ডারদের ধারণা হয়, মাস্কের কাছে টুইটারের গুরুত্ব অনেক বেশি। সেই জন্য টেসলা থেকে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার ফলে সামগ্রিকভাবে টেসলার মূল্য এক ধাক্কায় প্রায় অর্ধেকটা কমে যায়। এবার সেটিরই বাস্তব প্রভাব পড়ল এলন মাস্কের সম্পত্তিতে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...