আগামী ২ সপ্তাহে চীনে কোভিড উর্ধ্বগতির আশঙ্কা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:০৭ অপরাহ্ণ

চীনে আগামী ২ সপ্তাহ গুরুতর কোভিড রোগীর ঊর্ধ্বগতি দেখবে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। চীন তাদের কঠোর কোভিড নীতি আচমকা বদলে ফেলায় দেশটিতে করোনাভাইরাসে সম্ভাব্য মৃত্যু এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বেইজিং আগামী ২সপ্তাহ গুরুতর কোভিড রোগীর ঊর্ধ্বগতি দেখবে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির একজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ।

তুমুল বিক্ষোভের মুখে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশটি চলতি মাস থেকে লকডাউন ও কড়া শনাক্তকরণ পরীক্ষা সম্বলিত নীতির বিধিনিষেধগুলো একে একে তোলা শুরু করে। চড়া অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক মূল্য সত্ত্বেও এই ‘শূন্য কোভিড’ নীতিই ৩ বছর ধরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে দেশটির বেশিরভাগ নাগরিকের কাছ থেকে দূরে রেখেছিল।

বিধিনিষেধ শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে কোভিড রোগীর সংখ্যাও বাড়তে দেখা গেছে, শীতকালে এই প্রবণতা গতি পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একাধিক পূর্বাভাসে চীন আগামী বছর কোভিডে ১০ লাখের বেশি মৃত্যু দেখবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে।

কয়েকদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছিলেন, আগামী বছরের কোনো এক সময় এই জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।

কোন মৃত্যু কোভিডে হয়েছে বলে বিবেচিত হবে, আর কোনটি হবে না, এক্ষেত্রে সংকীর্ণ সংজ্ঞা ব্যবহার করা চীন মঙ্গলবার দেশটিতে কোভিডে নতুন কারও মৃত্যুর খবর দেয়নি। আগেরদিন তারা প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে ৫ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছিল।

নতুন মৃত্যুর খবর না মিললেও বেইজিংয়ের একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কেন্দ্রের বাইরে ডজনখানেক শবযানের সারি দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

চীনের রাজধানীর একজনকে কোভিডজনিত মৃত্যুর তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর সংশোধিত তালিকায় চীনে করোনাভাইরাসে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ৫ হাজার ২৪১ জনে দাঁড়িয়েছে।

আসছে দিনগুলোতেই এই সংখ্যা হু হু করে বাড়তে পারে; সামনের সপ্তাহগুলোতে রাজধানীতে গুরুতর কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়বে বলে সুপরিচিত এক চীনা শ্বাসযন্ত্র বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে ধারণা প্রকাশ করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস ।

আমাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, জ্বরের ক্লিনিক, জরুরি ও গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুত করতে হবে, সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন পিকিং ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট হাসপাতালের শ্বাসযন্ত্র বিশেষজ্ঞ ওয়াং গুয়াংফা।

মঙ্গলবার চীনজুড়ে গুরুতর রোগীর সংখ্যায় নতুন করে ৫৩ জন যোগ হয়েছে, আগের দিনও সংখ্যাটি ছিল ২৩ । চীন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে কতজনের অবস্থা গুরুতর, সেই সংখ্যা জানায় না।

কোভিডের এই ঢেউ জানুয়ারির শেষভাগে চূড়ায় পৌঁছাবে আর জীবনযাত্রা ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের শুরুতে ফের স্বাভাবিক হতে পারবে বলে অনুমান করছেন ওয়াং।

বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় চীনে কোভিডে এখন পর্যন্ত মৃত্যু অনেক কম। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন।

মঙ্গলবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বলেছে, করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার পর নিউমোনিয়া এবং শ্বাসযন্ত্র অকার্যকর হয়ে মৃত্যুই কেবল কোভিডে মৃত্যু বলে বিবেচিত হচ্ছে। এই ব্যাখ্যার কারণে অনেক মৃত্যুই হিসাবের বাইরে থেকে যাবে বলে মনে করছেন জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজির সহকারী অধ্যাপক বেনজামিন মাজের। চীনের টিকাসহ কোভিডের টিকা নেয়া ব্যক্তিদের সাধারণত নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হয় না।

রক্ত জমাট বেঁধে, হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ও সংক্রমণের কারণে শরীরে দেখা দেয়া চরম প্রতিক্রিয়া সেপসিসে বিশ্বজুড়ে অগণিত কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং অনেক সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ভাইরাসের রূপ পরিবর্তন নিয়ে যে শঙ্কার কথা বলছিলেন, এনএইচসি তাও উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, ভাইরাসের নতুন ধরনের আরও মারাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাদের এই ধারণার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন এশিয়া প্যাসিফিক সোসাইটি অব ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইনফেকশনের প্রেসিডেন্ট পল টামবায়াহ।

তিনি বলেছেন, আমার মনে হয় না এটা বিশ্বের জন্য হুমকি। বেশি সম্ভাবনা হচ্ছে, ভাইরাসটি মানবদেহকে সংক্রমিত করতে পারে এমন অন্যসব ভাইরাসের মতোই আচরণ করবে এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে, এর ফলে এটি আরও বেশি সংক্রামক এবং কম ক্ষতিকর হতে থাকবে।

নতুন করে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়াতে থাকায় এখনি বিশ্বজুড়ে কোভিড মহামারী সংক্রান্ত জরুরি অবস্থার ইতি টানার ঘোষণা বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে যেতে পারে বলে চীনের নেতৃস্থানীয় একাধিক বিজ্ঞানী এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...