বিএনপির কাউন্সিল হয় না ৬ বছর

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে একদিকে বাড়ছে নিষ্ক্রিয়তা, অন্যদিকে রয়েছে পদ ফাঁকা। কয়েকজন শুধু স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। মাঠের রাজনীতিতে নেই সক্রিয়। ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে শূন্যতা, নিষ্ক্রিয়তা, গ্রেপ্তার আর অসুস্থতায় অনুপস্থিত দুই-তৃতীয়াংশের বেশি। ১৯ সদস্যের মধ্যে মাঠের রাজনীতিতে অংশ নেই ১৩ জনের। অপর দিকে সক্রিয় আছে মাত্র ৬ জন।

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের কিছু দিন পরেই দলের স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলটির স্থায়ী কমিটি ১৯ সদস্যের মধ্যে ওই সময় ১৭ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ১৯ জুন স্থায়ী কমিটির দুটি শূন্য পদ পূরণ করে দলটি।

বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর ৪ জন স্থায়ী কমিটির সদস্য মারা যান, রাজনীতি থেকে অবসর নেন ১ জন, শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে দূরে আছে ১ জন, ভারতের শিলংয়ে আছে ১ জন, বয়সের কারণে রাজনীতিতে সংক্রিয় নেই ২ জন।

এছাড়া সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়া দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে আছেন দূরে। লন্ডনে বাস করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ৯ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস। মোট ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির ১৩ জনই অনুপস্থিত।

বাকি ৬ সদস্য হচ্ছেন, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, গয়েস্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

মারা যাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা হলেন তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ। আর রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে পদত্যাগ করেন লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। তবে মাহবুবুর রহমানের পদত্যাগপত্রটি দলটির পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কোনোটাই করা হয়নি।

শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে দূরে আছেন স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কোনো বৈঠকে এবং কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অংশ নেন না তিনি। সালাহউদ্দিন আহমেদ রয়েছেন ভারতের শিলংয়ে। মামলা জটিলতায় দেশে ফিরতে পারছেন না। কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন তারও কোনো তথ্য কেউ জানে না। বয়সের কারণে বৈঠকে নিয়মিত নন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও আবদুল মঈন খান। মাঝেমাঝে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও সভা সমাবেশে বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তারা নেই

স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ পদ খালি থাকলেও তা পূরণে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। জানা যায়, স্থায়ী কমটির শূন্য পদ পূরণে এর আগে একবার উদ্যোগ নিয়েছিল বিএনপির হাইকমান্ড। সে উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি।

বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণের সম্ভাবনা আপাতত নেই। নিয়মিত যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সেখানেও এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয় না। ২০২১ সালের মাঝামাঝি একবার আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। শূন্য পদগুলোতে অভিজ্ঞ নেতাদের নেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছিল স্থায়ী কমিটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। এতে বাগড়া দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শূন্য পদগুলোতে তরুণদের নেয়ার পক্ষে নিজের অবস্থান জানান তিনি। মূলত একারণেই স্থায়ী কমিটির শূন্য পদগুলোতে কাউকে নেয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর দলের জাতীয় কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর দলটির ছয়টি জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ৬ বছরের বেশি সময় পার হলেও কাউন্সিলের কোনো উদ্যোগ নেয়নি দলটি।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...