সুনামগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধে পাউবো’র ডিজাইন অনুসরণ হচ্ছে না

সিলেট অফিস,

  • প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:২৪ অপরাহ্ণ

সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে পাউবো’র ডিজাইন অনুসরণ করা হচ্ছে না। প্রাক্কলন অনুযায়ী ৬ ইঞ্চি উচ্চতায় মাটি দেয়ার পর দুর্মোজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে ৩-৪ ফুট মাটি ফেলার পরেও তা করা হচ্ছে না। এতে বাঁধ উপরের দিকে ফিটফাট থাকলেও নীচে দুর্বল থেকে যাবে। নিয়ম মোতাবেক দুর্মোজ করলে বাঁধের শক্তি বাড়বে এবং বাঁধ মজবুত থাকবে। অন্যথায় বাঁধের ভিতরে ফাঁকা থেকে যাবে। পানি আসলে সেই ফাঁকা অংশ দিয়ে চুইয়ে বাঁধ ভেঙে যাবে। শুধু দুর্মোজই নয়, নিয়মের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না, বাঁধে সাইনবোর্ড নেই, নেই মন্তব্য লেখার রেজিস্ট্রারও।

তাহিরপুরের বেশ কয়েকটি প্রকল্প সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি। যে কয়েকটি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে, সেখানে নেই কোন সাইনবোর্ড, রেজিস্ট্রার। দেয়া হয়নি কাজের লিখিত আদেশ। মৌখিক আদেশে মন মতো কাজ উঠিয়ে নিচ্ছেন পিআইসিরা। উপজেলার ৮ নং প্রকল্পে যেমন খুশি তেমনভাবে ফেলে রাখা হয়েছে মাটি। জামালগঞ্জ উপজেলার বৈজ্ঞানিক খাল অংশের ৫ নং প্রকল্পের প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ জায়গায় মাটি ফেলার কাজ প্রায় শেষ। ৫ ফুট উচ্চতার এই বাঁধের সাড়ে ৪ ফুট মাটি দেওয়া হলেও কোনো দুর্মোজ করতে দেখা যায়নি। দুর্মোজ ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে এই বাঁধ। এই প্রকল্পের বরাদ্দ ১৫ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা।

এমন অবস্থা শুধু এই উপজেলার নয়। পুরো জেলায় বাঁধের কাজের এমন নাজেহাল অবস্থা বলে অভিযোগ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ স¤পাদক ওবায়দুল হক মিলন। তিনি বলেন, প্রাক্কলন বলতে কোনো কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে না। যেভাবে মন চাইছে সেভাবে কাজ করা হচ্ছে। একটি প্রকল্পেও ঠিকমতো দুর্মোজ দেয়া হচ্ছে না। লাগানো হয়নি সাইনবোর্ড। লিখিত কার্যাদেশ ছাড়া মৌখিক আদেশেই শুরু হয়েছে কাজ। তাহিরপুর উপজেলার নয়গাঁও গ্রামের কৃষক অমলেন্দু বললেন, আমরা চাই সুন্দর বাঁধ। সুন্দর বাঁধ করতে হলে চাকা মাটি না দিয়ে গুড়া মাটি দিতে হবে। গুড়া মাটি দিলে বাঁধ শক্ত হয়। চাকা মাটি দিয়ে ভালোভাবে দুর্মোজ না করলে নিচের দিকে ঠস (ফাঁক) থেকে যায়। আর এই ঠস দিয়ে পানি ঢুকে। তাহিরপুর উপজেলার ৮ নং প্রকল্পের সভাপতি মানিক মিয়া বলেন, আমরা মৌখিকভাবে কাজ করার আদেশ পেয়েছি ১৯ জানুয়ারি। এখনো লিখিত কার্যাদেশ পাইনি। লিখিত আদেশ যেখানে পাইনি সাইনবোর্ড, রেজিস্ট্রার কিভাবে পাবো। জামালঞ্জের ৫ নং পিআইসির সভাপতি আব্দুর রহমান বললেন, মাটি ফেললেও কাজ শেষ হয়নি। আগেও ডলা (দুর্মোজ) দিয়েছি। সব মাটি ফেলে আবার ডলা দিবো।

জামালগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি বলেন, কাজে দুর্মোজ হচ্ছে না এমন রিপোর্ট পাওয়ার পরে কয়েকবার দুর্মোজ করার কথা বলেছি। এরপরও পিআইসি করছে না। তবে দ্রুতই দুর্মোজ করানো হবে। সাইনবোর্ডগুলো প্রিন্টে আছে, দ্রুত লাগানো হবে।

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব বললেন, দুর্মোজ হচ্ছেনা এরকম একটি রিপোর্ট পেয়ে পিআইসিকে নির্দেশ দিয়েছি মাটি সাইডে ফেলে দুর্মোজ দিয়ে আবার উপরে মাটি ফেলতে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে এই কাজ দেখভাল করার জন্য বলেছি।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...