তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: প্রাণহানি ছাড়াল ৩৬ হাজার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,

  • প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৬:৪২ অপরাহ্ণ

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের একসপ্তাহ পার হলেও মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও লাশ বের করছে উদ্ধারকারীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই দেশে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৩৬ হাজারে ছাড়িয়েছে।

সোমবার তুরস্কের জরুরি সমন্বয় কেন্দ্র সাকোম-এর বরাতে আলজাজিরা জানিয়েছে, তুরস্কে নিহতের সংখ্যা ৩১ হাজার ৬৪৩ জনে পৌঁছেছে। অন্যদিকে সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭৪ জনে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অংশে নিহত হয়েছে ৩ হাজার ১৬০ জন। আর সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪১৪ জনের।

এদিকে সপ্তম দিনের উদ্ধার অভিযানেও ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে প্রাণের সন্ধান মিলছে। উদ্ধারকারীরা বলছেন, যত সময় গড়াচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে। ভূমিকম্পের ১৪৭ ঘণ্টা পরেও ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে ১০ বছর বয়সী এক মেয়েকে উদ্ধার করেছে তুরস্কের উদ্ধারকারী দল।

এদিকে ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কে একদিকে যেমন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, এরই মধ্যে আবার লুটপাট শুরু হয়েছে। ভূমিকম্পের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে লুটপাটকারীরা বাড়িঘর এবং শপিংমলের দরজা জানালা ভেঙে যা পাচ্ছেন, নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে লুটপাটের ঘটনায় গোলাগুলিও হয়েছে। রোববার এই লুটেরাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। ইতোমধ্যে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আটটি প্রদেশ থেকে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লুটতরাজসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে ব্যাংক নোট, গহনা, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে।

পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, অনেকে দোকান থেকে শিশু খাদ্য লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেকে আমাদের ঘরবাড়িতে ঢুকে সামনে যা পাচ্ছে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি লুটপাটের হাত থেকে আমাদের গাড়িও রক্ষা পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ লুটপাটে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনতে সহায়তা করবে। তিন মাসের জরুরি অবস্থার বিষয়ে তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, জরুরি অবস্থা ঋণদাতা ও রাষ্ট্রদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের পরবর্তী শোষণ থেকে বিরত রাখবে।

এছাড়াও রোববার কয়েকটি উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, গত সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর দক্ষিণ তুরস্কে সংঘর্ষের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে।

জার্মান উদ্ধারকারী দল এবং অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী স্থানীয় সময় শনিবার অনুসন্ধান অভিযান স্থগিত করেছে বলে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও সংঘর্ষের কারণ জানাননি উদ্ধারকারীরা।

অন্যদিকে নিরাপত্তা হুমকির কারণ দেখিয়ে ইসরায়েল থেকে আসা উদ্ধারকারী দল ইউনাইটেড হাটজালাহ ছয় দিন পর তুরস্ক ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও তুরস্ক থেকে আরও তিনটি উদ্ধারকারী দল বিবিসিকে বলেছে, দক্ষিণ তুরস্কে লুটপাট ও সংঘর্ষের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। জার্মানি থেকে আসা উদ্ধারকারী দল ও অস্ট্রিয়ার সেনাবাহিনী গত শনিবার তাদের উদ্ধার অভিযান স্থগিত করেছে। তারা বলেছে, এখানে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে গোষ্ঠীগুলোর নাম উল্লেখ করেনি তারা।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (৬ ফেব্রয়ারি) সকালে ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক এবং সিরিয়া। তার পর অন্তত ১০০ বার জোরালো আফটার শকে কাঁপে দুই দেশের মাটি। এতে গুঁড়িয়ে যায় দুই দেশের হাজার হাজার হাসপাতাল, স্কুল ও অ্যাপার্টমেন্ট ভবন। এতে গৃহহীন হয়ে পড়ে দেশ দুটির লাখ লাখ মানুষ।

সিরিয়া-তুরস্কের এই ভূমিকম্পকে শতাব্দীর সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও প্রাণঘাতী বলে মনে করছেন কেউ কেউ। বলা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিনে এই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে ৫০ হাজার। ১৯৩৯ সালের পর এটি তুরস্কের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...