জনগণের মুক্তির আন্দোলন সিলেট থেকেই শুরু হবে : মির্জা ফখরুল

সিলেট অফিস,

  • প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২৩, ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। তাদের একটা ভালো কাজ দেখাতে পারবেন না। বাংলাদেশের সমাজকে পুরোপুরি বিভক্ত করেছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত দুটি নির্বাচনে দেখেছেন, কোনো ভোটই হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনে আগের রাতেই তারা ভোট নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ শক্তি দিয়ে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দেশ পরিচালনা করছে। তারা আমাদের সব অর্জনগুলোকে কেড়ে নিয়েছে, এদের পরাজিত করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে সিলেট মহানগর বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, আজ সিলেটের এই কাউন্সিল সাধারণ কাউন্সিল নয়। এই সিলেট থেকেই বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন ও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতেন। তাই জনগণের মুক্তির আন্দোলন সিলেট থেকে শুরু হবে।
ফখরুল বলেন, সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সারা দেশে নির্যাতন নিপীড়ন চলছে। আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মী রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। শত শত নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। হাজারো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরও আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। যেভাবেই হোক, ভয়াবহতা থামাতে হবে। যারা এই দলের জন্য রক্ত দিয়েছেন, তাদের ঋণ শোধ করার সময়ে এসেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেগুলো করেছে, এর মধ্যে ১৯৭২ সালের যে সংবিধান এদেশের মানুষ রচনা করেছিল, যে সংবিধান সবাই মেনে নিয়েছিল, সেই সংবিধানকে বারবার কাটাছেঁড়া করে একটি অকার্যকর সংবিধানে পরিণত করেছে। ১৯৭২ সংবিধানের মৌলিক যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যবস্থা, ১৯৭৫ সালে তা বন্ধ করে দিয়ে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা জোরে জোরে বলেন, তারা নাকি অনেক উন্নয়ন করেছেন। সেই উন্নয়ন কেবল গুটিকয়েক মানুষের জন্যে। ঢাকায় তারা পাতাল রেল, মেট্রোরেল করেছে। কত টাকা খরচ করেছে? যা খরচ হওয়ার কথা, তার ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি খরচ হয়েছে। পদ্মা সেতু করে বাহবা নেয়, আমাদের সময়ে সেই পদ্মা সেতুর ১০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। সেই সেতুর বাজেট ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে রোগীরা ঠিকমত শয্যা পান না, ওষুধ পান না, ডাক্তার পান না। ফলে স্বাস্থ্য সেবার জন্য বেশিরভাগ মানুষকে দেশের বাইরে চলে যেতে হচ্ছে। দেশে কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে গেছে। তারা যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লিজ নিয়েছে। আজকাল প্রকাশ্যে দিনের বেলায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা ছিনতাই হয়েছে। আবার যখন খুঁজে পায়, তখন দেড় কোটি টাকা কম।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী সরকার ভারতের বিশাল কোম্পানি আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী আমাদের দেড় লাখ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে। কথা দিয়েছিল ১০টাকা কেজি চাল দেবে। এখন মোটা চাল ৭০ টাকা। আর মুখে তারা উন্নয়নের বুলি আওড়ায়। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু আজ সরকারি হিসাবে প্রায় তিন কোটি বেকার।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ভেঙে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু করেছিলেন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছিলেন। আর আওয়ামী লীগ চায় বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচন।
সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীর সভাপতিত্বে ও রেজাউল হাসান কয়েছ লোদীর পরিচালনায় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এম এ জাহিদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ড. এনামুল হক চৌধুরী, তাহসীনা রুশদির লুনা, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে মিফতাহ সিদ্দিকীকে হারিয়ে নাসিম হোসাইন বিজয়ী হয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমকে হারিয়ে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী জয়লাভ করেছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রেজাউল করিম নাচন ও আব্দুল্লাহ শফি সাঈদ সাহেদকে হারিয়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব বিজয়ী হয়েছেন।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...