তীব্র ঋণ সংকটে জর্জরিত অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৯ এপ্রিল ২০২৩, ৪:০৮ পূর্বাহ্ণ

বড় আকারের ঋণ সংকটে ভুগছে রেকর্ড সংখ্যক উন্নয়নশীল দেশ। সামনের সপ্তাহগুলোয় এ সংকট আরো তীব্রতর হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের বসন্তকালীন বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর, অর্থমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ঋণ সংকট। খবর রয়টার্স।

উচ্চমূল্যস্ফীতি, ঋণ ব্যয় বৃদ্ধি ও শক্তিশালী ডলারের কারণে উন্নয়নশীল দেশের ঋণের কিস্তি ব্যয়বহুল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এতে চলতি বছরে অনেক দেশই ঋণখেলাপি হিসেবে হাজির হতে পারে। এবার যারা ঋণখেলাপি হতে পারে বা ঋণের কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খেতে পারে তাদের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ।
এ তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে মিশর। কভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চমূল্য। ডলার সংকটে ভোগা দেশটি বিদেশী ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। গত ডিসেম্বরে আইএমএফ থেকে নতুন করে ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা পেয়েছে মিসর। দেশটির মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ ছাঁড়িয়েছে, যা পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ।

কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ঘানা। গত বছর ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে সরকারি আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ। গত জানুয়ারিতে চতুর্থ দেশ হিসেবে ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন করেছে ঘানা। কয়েক দশকের দুর্নীতি ও অপশাসনের কারণে ২০১৯-এর পর ধসে পড়ে লেবাননের আর্থিক খাত। ২০২০ সালের শুরুতে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। গত ৩১ অক্টোবরের পর থেকে দেশটির নেই কোনো সরকারপ্রধান কিংবা সম্পূর্ণ সচল মন্ত্রিসভা। ২০২২ সালের এপ্রিলে আইএমএফের কাছে ৩ কোটি ডলারের ঋণ আবেদন করে লেবানন। ব্যাংকিং ও মুদ্রা বিনিময়সহ বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটি বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে বলে সতর্ক করে আইএমএফ।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং গত বছরের প্রলয়ংকরী বন্যায় রেকর্ড মূল্যস্ফীতিতে পড়েছে পাকিস্তান। এতে বিপজ্জনক জোনে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। আইএমএফের কাছ থেকে জরুরি ঋণ পেতে কয়েক দফা আলোচনা এগিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের ব্যালান্স অব পেমেন্ট সংকট কাটাতে বিভিন্ন সংস্থার ঋণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। চীন এরই মধ্যে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১৮০ কোটি ডলার তহবিল সরবরাহ করেছে। কিন্তু আইএমএফের ১১০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার কিস্তি বারবার পেছাচ্ছে। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বেইলআউটে ৬৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতাটি। কিন্তু ১১০ কোটি ডলারের কিস্তিটি কয়েকবার পেছাল। এদিকে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এত নিচে নেমে এসেছে, যা দিয়ে মাত্র চার সপ্তাহের আমদানি ব্যয় নির্বাহ সম্ভব।

গত বছর আন্তর্জাতিক ঋণখেলাপি হিসেবে নাম লেখিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশ শ্রীলংকা। কভিড মহামারী ও রাজনৈতিক সংকটে নাজেহাল দেশটির জরুরি পণ্য আমদানির মতোও ডলার নেই হাতে। গত মাসে ৩০০ কোটি ডলারের বেইলআউট প্যাকেজে সম্মত হয়েছে আইএমএফ। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও অন্য ঋণদাতাদের কাছ থেকেও ৪০০ কোটি ডলারের ঋণ নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটি।

তীব্র খাদ্য স্বল্পতায় ভুগছে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া। আইএমএফের কাছ থেকে ১৯০ কোটি ডলার ঋণ প্রক্রিয়া কয়েক মাস ধরে স্থগিত। এদিকে আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তি হিসেবে ২৭০ কোটি ডলার ঋণ সংগ্রহ করেছে ইউক্রেন। আইএমএফের ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারের চার বছর মেয়াদি ঋণ কর্মসূচির আওতায় এ কিস্তি পেল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। গত বছর সব ধরনের ঋণ পরিশোধ স্থগিত করে কিয়েভ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ইউক্রেনের ঋণ পুনর্গঠন আলোচনা চালাতে হবে। আইএমএফের প্রাক্কলন, দেশটির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে মাসে ৩০০-৪০০ কোটি ডলার প্রয়োজন পড়বে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...